সোমবার রাজধানীতে মর্মান্তিক দুই দুর্ঘটনায় অন্তত ১১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ দুই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নাগরিকরা। তারা ক্ষোভের নতুন ভাষা হিসেবে ব্যবহার করছেন ‘বেহেশত’ শব্দটি।
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’। মন্ত্রীর এ ভাষাকে প্রতিবাদী পোস্টে ব্যবহার করছেন নাগরিকরা।
অনুবাদক ও নারীবাদি সায়দিয়া গুলরুখ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমাদের বেহেশত: ১৫ই অগাস্ট ২০২২
চকবাজারে প্লাস্টিক কারখানার আগুনে পুড়ে মারা গেলেন ৬ জন। উত্তরায় বাস রেপিড ট্রানজিটের গার্ডার চলন্ত গাড়ির উপরে পড়ে ৪ জন নিহত’।
যদিও পরে উত্তরার দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
বেশ কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বেহেশত এর বাংলাদেশ শাখায় থাকার এইটাই সুবিধা। কখন বেহেশতের মেইন ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার হয়ে যাবেন বুঝতেই পারবেন না। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, হঠাৎ দেখবেন মেইন ব্রাঞ্চে চলে গেছেন’।
আবার অনেকই এ পোস্টটিও শেয়ার করছেন, ‘বেহেশতের রাস্তা দিয়ে একটি গাড়ি যাচ্ছিল। হঠাৎ নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের একটি গার্ডার গাড়ির ওপর এসে পড়ল। গাড়িতে সদস্য সংখ্যা, সাত। দুই জনকে বের করা হলো। বাকি পাঁচজনকে বের করা হলো না। বের না করা ওই পাঁচজনের তাড়াহুড়ো নেই। তাদের বদলে গেছে গন্তব্য। নাম হয়েছে লাশ!
কী সুন্দর আমাদের এই বেহেশত, তাই না?
উত্তরার মতো জনবহুল একটা রাস্তায় ফ্লাইওভারের গার্ডার এসে গাড়ির ওপর পড়ে, আর কোনোরকম কারণ ছাড়া নীরিহ কিছু মানুষের জীবন চলে যায়।
তাদের দোষটা কোথায়? এই বেহেশতে থাকাটাই কী সবচেয়ে বড় দোষ?
আমি এ দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছি না। চোখ ভারি হয়ে আসছে’।
তবে এ দুটো পোস্ট প্রথম কারা লিখেছিলেন জানা যায়নি।
আলি আবরার আর হক নামে একজন লিখেছেন, ‘নেই কোনো জবাবদিহি, নেই কোনো সতর্কতা। ২ দিন মাতামাতি করে এরপর হবে না কিছুই। দেশ এমনই এক বেহেশত যেখানে ঘর থেকে বের হতে পারলেও সেইফলি ঘরে ফেরার প্রোব্যাবিলি খুব কম।
সরকার কীভাবে এই দায়িত্বহীনতার তথা হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে?’
সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার চাপা পড়া গাড়ি কেটে একই পরিবারের পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই পরিবারের আরও দুই সদস্যকে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে চকবাজারের পলিথিন কারখানার আগুনে দগ্ধ ছয় জনের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। মৃত ছয়জনই হোটেলের কর্মী বলে জানানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেছেন, মৃতরা সবাই ডিউটি শেষে ঘুমিয়েছিলেন। বাইরে থেকে সাটার বন্ধ ছিল।
মৃতদের মধ্যে ওসমান, বিল্লা, শরীফ, স্বপনের নাম জানিয়েছে স্বজনরা। বাকি দুই জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তনে মরদেহ দেখে চেনা যাচ্ছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন