উপকূলীয় এলাকায় নজরদারির জন্য রাডার স্থাপনে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক
ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক আমার দেশ-এর হাতে
উপকূলীয় এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর নামে রাডার স্থাপন চুক্তির মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। উপকূলীয় এলাকায় নজরদারির জন্য রাডার স্থাপনে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার। বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের স্বাক্ষরিত এই সমঝোতা স্মারকে ৭টি আর্টিকেলের ৩৬টি শর্ত রয়েছে। এই শর্ত গুলোর মাধ্যমেই বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ভারতের হাতে সমর্পণ করেছেন শেখ হাসিনা। যদিও এ সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে সরকার দেশের মানুষকে কিছুই জানায়নি। এমনকি শেখ হাসিনার পছন্দের ব্যক্তিদের নির্বাচিত করার নামে মধ্যরাতের ভোটে গঠিত জাতীয় সংসদেও এবিষয়ে কোন আলোচনা করা হয়নি।
সমুদ্রে ২শ নটিক্যাল মাইলের অর্থনৈতিক জোন নিয়ে ভারতের সাথে এখনো বিরোধ মীমাংসা হয়নি। সমুদ্র উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ সীমানা অমীমাংসিত রেখেই শেখ হাসিনার সরকার উপকূলীয় নিরাপত্তা নজরদারি বাড়ানোর নামে ভারতের রাডার বসানোর আগ্রহ দেখিয়েছেন ২০১৯ সালের ভারত সফরে।
ভারতের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকটি আমার দেশ-এর হাতে রয়েছে। ইতোমধ্যেই গত সপ্তাহে আমার দেশ প্রকাশ করেছিল ভারতের সাথে সম্পাদিত বন্দর ও রাস্তা ব্যবহারের চুক্তির মাধ্যমে কিভাবে সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আজ (১৪ আগস্ট ২০২২) আমার দেশ প্রকাশ করছে উপকূলীয় নিরাপত্তা নজরদারির জন্য ভারতীয় রাডার ক্রয়ের মাধ্যমে কিভাবে জাতীয় নিরাপত্তা ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনা যতবারই ভারতে সফর করেছেন ততবারই জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকে ভারতের কাছে বিসর্জন দিয়ে দেশে ফিরেছেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর জাতীয় নিরাপত্তা বিসর্জন দিয়ে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকটিও স্বাক্ষরিত হয়েছিল শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের সময়। সমঝোতা স্মারকের বর্ণনা অনুযায়ী, শেখ হাসিনার আগ্রহেই উপকূলীয় নিরাপত্তা নজরদারির জন্য রাডার সিস্টেম সরবরাহ ও এটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
শুরুতেই বলা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহেই উপকূলীয় নিরাপত্তা নজরদারির জন্য ভারতের সাথে সম্পাদিত হচ্ছে এই সমঝোতা স্মারক। শর্ত অনুযায়ী উপকূলীয় নিরাপত্তা নজরদারির জন্য রাডার তৈরি এবং স্থাপন করবে ভারতের অখ্যাত একটি কোম্পানি। কোম্পানিটির নাম “বাহারাত ইলেকট্রনিকস লিমিটেড”। সংক্ষেপে বি ই এল। এই কোম্পানিটি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর দ্বারা পরিচালিত বলে জানা গেছে। এই কোম্পানি সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী ২০টি রাডার স্টেশন সিস্টেমের যন্ত্রপাতি তৈরি, সরবরাহ ও স্থাপন করে দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। ১২টি কন্ট্রোল সেন্টারের মাধ্যমে এই রাডার গুলো মনিটর করার কথা বলা হয়েছে এতে। এবং মনিটরিংয়ে প্রাপ্ত তথ্য ভারতের সাথে শেয়ার করার কথাও বলা হয়েছে সমঝোতা স্মারকের শর্তে।
সমঝোতা স্মারকের আর্টিকেল ১ (১.১.৩)-এর শর্ত অনুযায়ী এই রাডার সিস্টেমের স্টেশন গুলো বসানোর জন্য জায়গা নির্ধারণে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে জায়গা নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য স্থাপিত রাডারের স্থান নির্ধারণে সার্ভে করা হবে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে। ভারতীয় নৌ-বাহিনী তাদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার কথা বলা হয়েছে এই শর্তের আওতায়। তাদের বিপরীতে থাকবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের একটি প্রতিনিধি দল। যারা যৌথভাবে সার্ভে করে স্থান নির্ধারণ করবে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রে ভারতের সাথেই রয়েছে সমুদ্রসীমা। ভারতীয় নৌ-বাহিনীর দ্বারাই আক্রান্ত হওয়ার বা সার্বভৌমত্ব বিরোধী কার্যক্রমের আশঙ্কা সব সময় থাকে। ভারতীয় জেলেরাই বাংলাদেশের সীমান্তের অভ্যন্তরে মাছ ধরতে আসে এমন খবর পত্রিকায় আসে হরহামেশাই। অথচ, ভারত থেকে রাডার ক্রয় করে চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে রাডারে প্রাপ্ত তথ্য বিনিময়ের কথা রয়েছে সমঝোতা স্মারকে। এর মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত সব তথ্য ভারতের কাছে সমর্পণ করতে হবে। প্রকারান্তরে জাতীয় নিরাপত্তা ভারতের হাতেই সমর্পণ করা হয়েছে।
সমঝোতা স্মারকের আর্টিকেল ১ (১.১.৬) এ বলা হয়েছে, সিকিউরিটি আর্কিটেকচার তৈরি করবে ভারত। অর্থাৎ ভারতের তৈরি আর্কিটেকচারে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা নজরদারি করার কথা বলা হয়েছে এই আর্টিকেলে।
সমঝোতা স্মারকটির আর্টিকেল ২ (২.১.২) এ বলা হয়েছে, স্থান নির্ধারণ ও স্থাপনের জন্য ভারতের নেভি এবং রাডার তৈরিকারক কোম্পানির যেসব কর্মকর্তা আসবেন তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবাধে চলাচলের সুযোগ ও লজিস্টিক সাপোর্টের দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের।
একই আর্টিকেলের ২.১.৭-এ বলা হয়েছে, ডেপুটেশনে ভারতীয় নেভি এবং রাডার তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের লোকজন আসবে এবং তাদের সকল খরচ দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।
সমঝোতা স্মারকের আর্টিকেল ৪ এর ৪.৪-এ বলা হয়েছে, রাডারে প্রাপ্ত সকল তথ্য ভারতের সাথে শেয়ার করা হবে। অথচ, বলা হচ্ছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা জন্য উপকূলীয় নজরদারি বাড়াতে এই রাডার সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু রাডারে প্রাপ্ত সকল তথ্য ভারতের সাথে শেয়ার করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হচ্ছে সমঝোতা স্মারকে। এই শর্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরাপত্তার পুরো বিষয়টিকেই ভারতের হাতে সমর্পণ করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, ভারতের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্যই এই উপকূলীয় নিরাপত্তা নজরদারির নামে ভারতীয় রাডার বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়েছে।
এই রাডার দিয়ে বাংলাদেশের উপর নজরদারির মাধ্যমে ভারতীয় আগ্রাসনকেই সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন