আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে বাংলাদেশ সরকার অর্থ চেয়েছে। এর মধ্যে শুধু আইএমএফ এর কাছেই চাওয়া হয়েছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। জানা গেছে, আইএমএফ-এর সঙ্গে সরকারের প্রাথমিক আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় নয় দিন ধরে আলোচনার পর এই অগ্রগতির ফলে সামনে সংস্থাটির দ্বিতীয় প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশে আসবে।
এমতাবস্থায়, শুক্রবার রাতে সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসে। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা এবং পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। হুট করে সরকারের এমন ঘোষণায় জনজীবনে মারাত্মক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে, সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন।
দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে শনিবার ব্যাখ্যা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোসহ পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার।
ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে আইএমএফ জ্বালানি খাত থেকে ভর্তুকি তুলে নিতে বলায় সরকার হঠাৎ করেই তেলের দাম এতো পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে বলে তথাকথিত 'সূত্রের বরাতে' বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানারকম সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু, এ নিয়ে খোদ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের মুখ থেকেই এসেছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য।
ভর্তুকি কমাতে আইএমএফ'র পরামর্শে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। শনিবার যমুনা টিভিকে (ভর্তুকি কমাতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, আইএমএফ’রও এমন পরামর্শ: পরিকল্পনামন্ত্রী) তিনি বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি তেল বিক্রির ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। সমন্বয় করারও প্রয়োজন ছিল।
ভর্তুকি কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর ঋণ পেতে এই পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ। আইএমএফ বলুন কিংবা বিশ্বব্যাংক, তাদের সংস্কারের মানে হচ্ছে তারা যে নিয়মকানুনের কথা বলেছে সেগুলো মেনে চলতে হবে।"
কিন্তু, পরিকল্পনামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল! জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে আইএমএফ'র ঋণের কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা সাফ নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। তিনি প্রথম আলোকে (মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে আইএমএফের ঋণের কোনো সম্পর্ক নেই) বলেছেন, "জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে আইএমএফের কোনো কিছুর সম্পর্ক নেই। সারা বিশ্বেই জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। আমদানি করতে হয় বলে বেড়েছে আমাদের দেশেও।" অর্থমন্ত্রী হিসেবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, "বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় শুক্রবার রাতে একটা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বৃদ্ধির কারণ হিসেবে এতে যেসব যুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোই আমার কথা।"
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন