রাজধানীর পল্লবীতে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে কিশোর গ্যাং ‘ডিটিসিবি স্ট্রিট’ গ্রুপের হামলায় গুরুতর আহত হয় আব্দুর রহমান মিঠু নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, ভাইরাল হতে সহজ পথ হিসেবে হামলার পুরো দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে বানানো হয় টিকটক। পরে সেটি নিজেদের মেসেঞ্জার গ্রুপে শেয়ার করে গ্যাংয়ের সদস্যরা। আপনি-তুমি দ্বন্দ্বের জেরে গত শনিবার দুপুরে মিরপুর ১২ নম্বর ডি ব্লক ঈদগাহ মাঠে ঘটনার সূত্রপাত। এর পর আরও দুই দফায় হামলা চালানো হয় শিক্ষার্থী মিঠুর ওপর। এ ঘটনায় ছেলেকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে গতকাল রবিবার পল্লবী থানায় মামলা করেছেন আব্দুল মান্নান। তার আগে গত শনিবার রাতভর পল্লবী এলাকায় ব্লক রেইড দিয়ে ঘটনায় জড়িত ‘ডিটিসিবি স্ট্রিট’ গ্যাংয়ের হাবিব, রাসেল, সজীব, মিরাজ ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আহত মিঠু বলেন, ‘হাবিবের কিশোর গ্যাং রয়েছে, সদস্য প্রায় ৪০-৫০ জন। ওমর ও তানভীরও হাবিরের অনুসারী। আমাকে তুলে নিয়ে যখন মারছিল তখন তাদের একজন ভিডিও ধারণ করে। আর সেই ভিডিও করার সময় একজন বলছিলেন- ওরে পিটানোর ভিডিও দিয়ে টিকটক বানামু। ওই ভিডিও ফেসবুকে ছাইড়া দিলেই আমরা ভাইরাল! মার হালারে।’ হামলার ঘটনায় ধারণকৃত সেই ভিডিওটি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে দেখা যায়, মাঠের মধ্যে ৫-৬ জন কিশোর মিঠুকে ঘিরে রেখে অনবরত কিল-ঘুষি মারছে। একপর্যায়ে ওই কিশোররা তাকে (মিঠু) পেটাতে পেটাতে মাটিতে ফেলে দেয়।মিঠুর বাবা আব্দুল মান্নান জানান, মিঠু ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। সপরিবারে তারা পল্লবীর সেকশন-১২, ডি-ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। মিঠু লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার ফার্মেসিতে বসেন। আপনি-তুই বলাকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে স্থানীয় কিশোর গ্যাং ‘ডিটিসিবি স্ট্রিট’ গ্রুপের সদস্য ওমরের সঙ্গে মিঠুর বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে ওমর বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়ে আসছিল। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফার্মেসি থেকে বাসায় যাওয়ার পথে মিঠুকে ডেকে ওমর বলে- ‘তোর বন্ধু আমার সিনিয়র, কিন্তু তোরে আমার সিনিয়র পোষায় না। তাই হুশ করে কথা কইছ; না হলে খবর আছে তোর।’ এর পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই গ্যাংয়ের তানভীর ফোন দিয়ে বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে মিঠুকে পল্লবীর ঈদগাঁও মাঠে ডেকে নিয়ে মারধর করে। মিঠুর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে পরে শোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়।
ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিঠুর বাসার সামনে তাকে একা পেয়ে ‘ডিটিসিবি স্ট্রিট’ গ্যাংয়ের হোতা হাবিবের নেতৃত্বে ওমর, তানভীর, সজীব, সিফাত, ইমন, মেহেদী-২, আদনান, মিশন, মাহাবুব, মাহমুদ, রাসেল, মেহেদী, কিরন, রায়হান, বাবু, ফেরদৌস, নাঈম, প্রিতম, আহাদ, আফজাল, রাব্বি, রাকিবসহ এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য অচেনা আরও ১৬ জন মিঠুর হাত ধরে টানাহ্যাঁচড়া করে ১২ নম্বর সেকশনের ত-ব্লকের ৩ নম্বর রোডে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষানিকেতন স্কুলের ভিতরে তুলে নিয়ে এসে সিনিয়র-জুনিয়রের জের ধরে লোহার রড ও ইট দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তানভির ভোঁতা দা দিয়ে মিঠুর বাঁ পায়ের হাটুর নিচে কোপ দেয়। ওমর, মিশন ও মেহেদী মিঠুকে গলা টিপে শ্বাসরােধ করে হত্যার চেষ্টা করে। অন্যরা লোহার রড ও ইট দিয়ে মিঠুর মাথায়, বুকে, পিঠে, দুই হাতে ও দুই পায়ের ওপর এলোপাতাড়ি পিটিয়ে নীলাফুলা জখম করে। খবর পেয়ে মিঠুর দুলাভাই মামুন জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করলে পল্লবী থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মিঠুকে উদ্ধার করে। রাতেই মিঠুকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মারামারির সময় গ্যাংয়ের এক সদস্য তার মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে মারামারির পুরো দুশ্য ভিডিও ধারণ করে। এরপর টিকটক ভিডিও বানিয়ে তা নিজেদের ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করে ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে হামলায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন আহত তরুণের বাবা আ. মান্নান।
মামলার তদন্ত কর্মককর্তা পল্লবী থানার এসআই জিয়া উদ্দিন জানান, এই ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। হামলায় জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন