বগুড়ায় কুরবানির পশুরহাটে আলোড়ন তুলেছে বাংলালিংক, হিরো আলম, রবি ও ভারতীসহ হরেক নামের ষাঁড়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ১৫শ কেজি ওজনের বাংলালিংকের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। নাম ও আকৃতির কারণে এসব পশু দেখতে জনগণ ভিড় করছেন। তবে কাঙ্ক্ষিত দাম না বলায় ষাঁড়গুলো এখনো বিক্রি হয়নি।
বাংলালিংক: প্রসবের পর দেখতে সুন্দর ও নাদুসনুদুস হওয়ায় বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নাড়ুয়ামালা ইউনিয়নের বাওইটোনা গ্রামের বাসিন্দা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের গাবতলী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক জহুরুল ইসলাম জুয়েল শখের বশে তার ষাঁড়ের নাম রাখেন ‘বাংলালিংক’। গত সাড়ে চার বছরে ওজন হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কেজি।
এবার কুরবানির ঈদে বিক্রির চেষ্টা চলছে। দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। তবে বাজার দরেই বিক্রি করবেন। এখনো বাংলালিংককে হাটে-বাজারে তোলা হয়নি। বিক্রি না হলে তাকে ঢাকা বা চট্টগ্রামে নিয়ে সেখানকার হাটে তোলা হবে।
খামারি জুয়েল জানান, হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় বাংলালিংককে নিজ জমিতে চাষাবাদ করা নেপিয়ার ঘাস, খড় ও ভুষি খেতে দেওয়া হয়। প্রতিদিন খরচ প্রায় ৫০০ টাকা। কখনো কোনো ক্ষতিকারক ইনজেকশন বা মোটাতাজা করার চেষ্টা করা হয়নি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে বাংলালিংককে লালনপালন করা হয়েছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশাল আকৃতির ষাঁড় দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন।
ভারতী: বগুড়া শহরের রহমাননগর এলাকার আবেদীন ডেইরি ফার্মের মালিক আব্দুস সবুর বাবু তার খামারে এক হাজার ৩০০ কেজি ওজনের একটি ষাঁড় পালন করেছেন। তিন বছর বয়সী ষাঁড়টির আদর করে নাম রেখেছেন ‘ভারতী’। প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে তৈরি করা ষাঁড়টির দাম চাইছেন ১০ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় লাখ টাকা দাম উঠেছে।
রবি: বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় সর্বোচ্চ এক হাজার ১০০ কেজি ওজনের ষাঁড় তৈরি করেছেন বুরইল ইউনিয়নের সরিষাবাদ গ্রামের আবদুর রাজ্জাক। রোববার জন্মগ্রহণ করে বলে আদর করে এর নাম রাখেন, রবি। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতা ও সাড়ে ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাহামা জাতের ষাঁড়ের দাম ১০ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে।
আবদুর রাজ্জাক জানান, তিনি প্রাকৃতিক খাদ্য খাইয়ে ষাঁড়টি তৈরি করেছেন। প্রতিদিন কমপক্ষে তিনশ টাকার খাবার দিতে হয়। এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারেননি। এখানে ভালো দাম না পেলে ঢাকায় নিয়ে যাবেন।
হিরো আলম: বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার জিয়াম হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় পালন করেছেন। আট ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার এ ষাঁড়ের নাম দিয়েছেন, ‘হিরো আলম’। সাড়ে তিন বছর বয়সী ষাঁড়ের ওজন প্রায় ৯০০ কেজি। দাম চাইছেন আট লাখ টাকা। হিরো আলমকে দেখতেও তার বাড়িতে মানুষ ভিড় করছেন।
জিয়াম জানান, তিনি সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে খড়, ঘাস, খৈল, ভুষি, চালের কুড়া, ভুট্টাসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান। নিয়মিত গোসল করানো, পরিষ্কার রাখা, ভ্যাকসিন দেওয়া ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তবে বাড়িতে জনগণের বেশি ভিড় হওয়ায় হিরো আলম ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছেনা। জিয়ামের বিশ্বাস কুরবানির আগেই হিরো আলমকে সাত লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
লালু ও কালু: শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের নয়ানা মাঝপাড়া গ্রামে ব্যবসায়ী জাফিরুল ইসলাম জাফু হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান ও শাহীওয়াল জাতের ষাঁড় পালন করেছেন। সখের বশে নাম দিয়েছেন লালু ও কালু। খাবারের দাম বেশি হওয়ায় প্রতিদিন তার ৬০০ টাকার খাবার দিতে হয়। তাই দুটির দাম চাইছেন ১৪ লাখ টাকা। তবে তিনি কিছু কম হলেও বিক্রি করবেন।
জসিম ও যুবরাজ: বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলার ভাগকোল গ্রামের আবদুল করিমের স্ত্রী বিউটি বেগম এবারের কুরবানির হাটে বিক্রির জন্য ৮৬০ কেজির জসিম ও ৭৬০ কেজি ওজনের যুবরাজ ষাঁড় তৈরি করেছেন। প্রাকৃতিভাবে তৈরি ষাঁড় দুটিকে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার খাবার খাওয়াতে হয়। চার বছর ধরে সন্তানের মতো লালন-পালন করা সাদা-কালো রঙের জসিম ও যুবরাজকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ষাঁড় দুটি কিনেছিলেন এক লাখ টাকায়। নাদুসনুদুস ষাঁড় দুটিকে দেখতে প্রতিদিন বাড়িতে অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন।
জসিমের দাম আট লাখ ও যুবরাজের দাম সাত লাখ টাকা দাবি করা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ কাঙ্ক্ষিত দাম বলেনি। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ১০ লাখ টাকা। তবে বিউটি বেগম এত কম দিয়ে তার আদরের ষাঁড় বিক্রি করবেন না।
গারল: শনিবার সারিয়াকান্দি পৌর হাটের প্রধান আকর্ষণ ছিল মরুর গারল। সবুজ মিয়া নামে এক গৃহস্থ ৪৫ কেজি ওজনের সুদর্শন গারল লালন পালন করেছেন। তিনি হাটে দাম ৬০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন।
তিনি দাবি করেন, ক্রেতারা সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা দাম বলেছেন। ৫৫ হাজার টাকা হলে তিনি গারল বিক্রি করবেন।
বগুড়া জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ১২ উপজেলায় ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট চার লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি গবাদি পশু কুরবানির উপযোগী করেছেন। এ বছর জেলায় কুরবানি ঈদে পশুর চাহিদা রয়েছে, ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭টি। এ হিসাবে জেলায় অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯২০টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, এ বছরও কুরবানির পশুর সংকট নেই। চাহিদার বেশি পশু তৈরি রয়েছে।
তিনি বলেন, শৌখিন ও সবচেয়ে বড় আকৃতির ষাঁড় গাবতলীর বাংলালিংক, শহরের রহমাননগরের ভারতী, ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার হিরো আলম ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ষাঁড়গুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন