প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম দুই ধাপের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তৃতীয় ধাপের ভাইভা প্রস্তুতি ও করণীয় নিয়ে লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশ নেওয়া প্রার্থীদের অনেকেই জানিয়েছেন, সহজ প্রশ্নই জিজ্ঞেস করা হয়েছে। তবে সম্ভাব্য বিষয়বস্তুর ওপর বিস্তর জানাশোনা থাকলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে উত্তর দেওয়া যাবে।
প্রার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পঠিত বিষয়, গ্রাম বা উপজেলা—এসব নিয়ে প্রশ্ন করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এ ছাড়া প্রার্থীর হাতের লেখাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রার্থী কোনো রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করেন কি না, কেন করেন—এমন প্রশ্নও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রার্থী।
কমন প্রশ্ন
কিছু কমন প্রশ্ন বহু প্রার্থীকেই করা হয়। এ ধরনের সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তরে আগে থেকেই তৈরি থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার পঠিত বিষয়ের মৌলিক টপিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা এবং ওই পঠিত বিষয় থেকে অর্জিত জ্ঞান ব্যাংকিং সেক্টরে কিভাবে প্রয়োগ করবেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা; আপনার নিজের সম্পর্কে গুছিয়ে বলার মতো প্রস্তুতি থাকা; সংশ্লিষ্ট চাকরিটি কেন আপনার পছন্দ এবং এই চাকরির জন্য কেন আপনাকে বেছে নেওয়া হবে—এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হতে পারে। এ ছাড়া আপনার পঠিত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও ভালোভাবে জানা থাকতে হবে। আপনার শিক্ষাজীবনের কোনো প্রতিষ্ঠানে আগে কোনো বিশিষ্ট বা আলোচিত ব্যক্তি পড়াশোনা করেছেন কি না সে ব্যাপারেও জানুন।
ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদিতে নিজ এলাকার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ঘটনা থাকলে তা জেনে রাখুন। নিজের এলাকা মুক্তিযুদ্ধের সময় কত নম্বর সেক্টরে আওতাভুক্ত ছিল, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম, নিজ এলাকার কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, নদ-নদী, প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান, পর্যটনকেন্দ্র ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখুন।
অনুবাদ কেমন জানেন?
বিগত বছরগুলোতে নিয়োগ পাওয়াদের অনুবাদ থেকে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে। ছোট ছোট দু-তিনটি অনুবাদ জানতে চাওয়া হয়। বাংলা থেকে ইংরেজি ও ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ। এ ক্ষেত্রে ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বিগত বছরে আসা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার অনুবাদগুলো দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রচলিত বিভিন্ন প্রবাদ বাক্যের ইংরেজি জানা থাকা ভালো।
সাংস্কৃতিক খবরও রাখতে হবে
ভাইভা বোর্ডে সাধারণত কবিতা আবৃত্তি বা ছড়া পাঠ করতে বলা হয়। এ ছাড়া কেউ গান জানলে গানও গাইতে পারেন। তাই এ বিষয়ে আপনার দখল থাকলে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন। সবাইকেই যে কবিতা, গান বলতে বলা হয় এমন নয়। বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে দেখা যায়। তাই আপনার জেলার বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের সম্পর্কে জেনে রাখুন।
সাম্প্রতিক বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ
দেশ-বিদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন আলোচিত বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। যেমন—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের নাম, বর্তমান সরকারের পাঁচটি বড় অর্জন, পদ্মা সেতু প্রভৃতি। এ ছাড়া সিলেট অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যা, ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২ ও আফগানিস্তানের ভয়াবহ ভূমিকম্প নিয়েও প্রশ্ন হতে পারে।
ভাইভার আগে
ভাইভা পরীক্ষার আগের রাতে যেন পর্যাপ্ত ঘুম হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। ভাইভার পোশাক সব সময়ই ফরমাল হওয়া চাই। ছেলেদের জন্য সাদা ফুলশার্ট হলে ভালো। সাদার ওপর যেকোনো স্ট্রাইপ হলেও চলবে। সাদা পরতে হবে এমন কোনো কথা নেই, অন্য রঙের মানানসই ফরমাল শার্টও পরা যেতে পারে। এ ছাড়া ফরমাল প্যান্ট পরলে ভালো হয়। গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, জিন্স প্যান্ট এগুলো ফরমাল প্যান্ট না। চাইলে টাইও পরতে পারেন। স্যান্ডেল না পরে শু পরার চেষ্টা করুন।
মেয়েরা মার্জিত ডিজাইনের শাড়ি বা থ্রিপিস পরুন। এ ক্ষেত্রে হালকা রঙের জামদানি শাড়ি পরা যেতে পারে। অতিরিক্ত অলংকার এবং মেকআপ পরিহার করুন। তবে হালকা মেকআপ করা যেতে পারে। খাওয়াদাওয়া করে ভাইভা দিতে যাওয়া ভালো। মা-বাবার দোয়া নিয়ে, হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে ভাইভা দিতে রওনা হোন। পকেটে একটি কলম রাখুন, যা ভাইভা বোর্ডে কাজে লাগতে পারে।
দরকারি কাগজপত্র
ভাইভার তারিখের আগেই দরকারি কাগজপত্র গুছিয়ে রাখুন—
- জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)।
- প্রার্থীর অনলাইনে আপলোডকৃত আবেদনের মূল কপি এবং আপলোডকৃত লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্রের মূল কপি। রঙিন প্রিন্ট দিয়ে নিয়ে গেলে হবে।
- মৌখিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র বা ভাইভা কার্ড (যেটা ডাকযোগে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানায় পৌঁছাবে)।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের মূল কপি। যাঁদের স্নাতক বা সমমানের পরীক্ষার সনদে ফলাফল প্রকাশের তারিখ উল্লেখ নেই, তাঁরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফল প্রকাশের তারিখসহ প্রত্যয়ন দাখিল করবেন।
- সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদের মূল কপি।
- পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত পোষ্য সনদের মূল কপি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন