‘মুহূর্তের মধ্যে কী হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। একটু পর দেখি আমাদের গাড়ির (বাস) ওপরের অংশ নেই। ধান মাড়াই করা দুইজন ও মোটরসাইকেলে থাকা দুইজন গাড়ির নিচেই পড়ে আছে। আর প্রাইভেট কারের সবাই পিষে গেছে।’
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষের বর্ণনা এভাবেই দিচ্ছিলেন ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি রাজিব পরিবহনের বাসটির যাত্রী ছিলেন। আজ শনিবার বেলা ১১টায় কাশিয়ানীর ফুরকা ইউনিয়নের দক্ষিণ ফুরকা এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন।
ইসমাইল হোসেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে রাজিব পরিবহনের বাসটিতে ওঠেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোপালগঞ্জ থেকে ছাড়ার পর চালক দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ওইখানে (ঘটনাস্থলে) আসলে দেখতে পেলাম সামনের দিক থেকে একটি প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল এসেই বিকট আওয়াজে বাসের সঙ্গে ধাক্কা খেল। প্রাইভেট কার ছিটকে পড়ল সড়কের পাশে ধান মাড়াই মেশিনের ওপর।’
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম বলেন, পিরোজপুরে মঠবাড়িয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা রাজিব পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরা এলাকায় পৌঁছালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ব্যক্তিগত গাড়ি ও কাশিয়ানী থেকে ছেড়ে আসা মোটরসাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুমড়েমুচড়ে ব্যক্তিগত গাড়িটি সড়কের পাশে ধানমাড়াইরত মেশিনের ওপর গিয়ে ছিটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের তিনজন, ধানমাড়াইরত স্বামী-স্ত্রীসহ আটজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও অন্তত ৩০ জন।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে ২০ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন রয়েছেন। তাঁরা হলেন ঢাকার বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক ও গোপালগঞ্জ শহরের বটতলা এলাকার প্রফুল্ল কুমার সাহার ছেলে বাসুদেব কুমার সাহা (৫২), তাঁর স্ত্রী শিবানী সাহা (৪৮) ও ছেলে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্বপ্নিল সাহা (১৯)। চিকিৎসক বাসুদেব সাহার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক আজিজুর ইসলামও (৪৪) নিহত হয়েছেন।
নিহত বাকি চারজন হলেন কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের পেয়ার আলী মোল্লার ছেলে ফিরোজ মোল্লা (৪৮), তাঁর স্ত্রী রুমা বেগম (৪০), একই গ্রামের জিন্দার ফকিরের ছেলে অনীক বাবু (২৮) ও অনীকের নববিবাহিত স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার (১৯)। ফিরোজ ও রুমা সড়কে ধানমাড়াইয়ের কাজ করছিলেন। অনীক ও ইয়াসমিন মোটরসাইকেলে কাশিয়ানী থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন।
আরও পড়ুন
কাশিয়ানীতে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৭
কাশিয়ানীতে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৭
দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন গোপালগঞ্জের দিদার শরীফ (৫০), সোবাহান (৩৮), রুমা (৩০), মাসুম মোল্লা (১৩), ইসমোতারা (৪০), আলিফ (৫), সিফাত (৩), নড়াইলের বাদল (২৫), বায়েজিদ (১২), মারুফ (২২), ঢাকার আরজু বেগম (৩৫), ফারুক হোসেন (৫০), হিরা বেগম (৩৬), হাওয়া বেগম (৩৪), হোসাইন (১২), আবদুর রহমান (৫), পিরোজপুরে কালাম মোল্লা (৪৭), কামরুল (৪৬) ও শরীয়তপুরের জোহরা (৭৫)।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন