সয়াবিন তেলের পর রাতারাতি বেড়েছে পেঁয়াজের দর। মাংসের দাম তো ঈদের আগে থেকেই চড়া। ঈদের পর বেড়েছে ডিমের দাম। কয়েক দিনের বৃষ্টির প্রভাবে ঊর্ধ্বমুখী তরিতরকারির বাজারও। এর মধ্যে আবার নতুন করে বেড়েছে দেশি রসুনের দাম। জিনিসপত্রের দামের উত্তাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বাজার খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছে না ভোক্তার পকেট। বাধ্য হয়ে বাজারের তালিকা কাটছাঁট করে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে সীমিত ও নিম্ন আয়ের ভোক্তাদের।
গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সয়াবিন তেলের সরবরাহ বেড়েছে। অনেক দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ লিটারের বোতল। তবে ছোট বাজার ও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোতে এখনো চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। তবে এসব দোকানের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গতকাল ডিলাররা ক্রয়াদেশ (অর্ডার) নিয়েছেন, যা আজ (শনিবার) তেল পাওয়া যাবে। অপরদিকে খোলা সয়াবিনের দাম আগের মতোই প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০৪-২০৮ টাকার মধ্যে। সরিষার তেলের লিটারও (ব্র্যান্ডের) বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকায়। ভোজ্যতেলের বাজারের অস্থিরতা কাটার আগেই তেজ বেড়েছে পেঁয়াজের। ঈদের আগে ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
মালিবাগের ‘খোরশেদ বাণিজ্যালয়ের’ ব্যবসায়ী মো. শাহবুদ্দিন বলেন, কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে, তবে চাহিদার অনুপাতে কম। ডিলাররা জানিয়েছে, সরবরাহ আরও বাড়বে। পেঁয়াজের বেলায় পাইকাররা বলছেন, আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও কম। তাই বস্তাপ্রতি (৮০ কেজি) ১০০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। খুচরায় যা ৪৫ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না।
এদিকে একদিনের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। যাত্রাবাড়ী বাজারের মুদি দোকানি হাফিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার আগের কেনা দেশি রসুন বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। আজ নতুন কেনা রসুন বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত। কয়েক দিন আগে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানিকৃত রসুনের দাম এখন বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে।
হাফিজ বলেন, পাইকারিতে পেঁয়াজের মতো রসুরের দামটাও রাতারাতি অস্বাভাবিক বেড়েছে। গতকাল দেশি রসুন ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আজ তা আমাকেই কিনতে হয়েছে ৬৮ টাকায়। পরিবহন, লেবার খরচসহ বাছাই করার পর তা ৮০ টাকায় বিক্রি করছি।
কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর বাণিজ্যালয় আড়তের ব্যবসায়ী মো. ফয়েজ বলেন, পেঁয়াজের মতো দেশি রসুনের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। বৃষ্টিও আরেকটা ইস্যু। এসব কারণে দামটা বাড়তি রয়েছে।
বাজারে তরিতরকারির দামেও বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। রায়েরবাজার কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. সেন্টু মিয়া বলেন, বাজারে বেশির ভাগ তরিতরকারির দাম ৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি শজনে ডাঁটা ৮০ টাকা, কচুমুখী ৭০ টাকা এবং বেগুন ও করলা ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। প্রতিকেজি কচুর লতি ৬০ টাকা, ঝিঙা, মিষ্টিকুমড়া ও পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পটোলের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি। ঢেঁড়স পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে টমেটোর দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসার কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া একেকটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও চালকুমড়া ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলার হালি ৪০ টাকা।
এদিকে ঈদের আগে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া গরুর মাংসের দামে কমেনি। ব্রয়লার মুরগির দামটাও নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। ডিমের ডজন এক লাফে বেড়ে হয়েছে ১১৫-১২০ টাকা।
মালিবাগ বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. মেহেদী হাসান সোহাগ বলেন, ‘বেতনের সীমিত যে টাকা, তা দিয়ে এখন খেয়ে পরে বেচে থাকাটাই কষ্টকর। দুই হাজার টাকা নিয়ে বাজারে এসে ৫ লিটারের সয়াবিন, দুই কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি রসুন, ডাল, দুই কেজি চিনি, ৩০টি ডিম আর কিছু তরিতরকারি কিনতেই টাকায় টান পড়েছে। কাপড় ধোয়ার ডিটারজেন্ট, সাবান, নারিকেল তেল, সর্ষে তেল, মসলা, কয়েল, বাসন মাজার সাবানসহ আরও অনেক কিছু কেনার বাকি। যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, ভেবে পাই না কীভাবে মাস পার করব।’
মাছের বাজারেও উত্তাপ বেড়েছে। কিছুদিন আগেও রুই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন তা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। কাতলা, চিংড়ি, শিং, মাগুর, পাবদার দামও বাড়তি। এ ছাড়া কাঁচকির কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। আইড়, চিতল, বেলে মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে।
বাজারে সাধ্যের মধ্যে চিংড়ি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কারণ একটু তাজা চিংড়ির কেজি কিনতে পকেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সাধারণ জাতের চিংড়ি একটু কমে পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিদরে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন