ময়মনসিংহ নগরীর কোচিং পাড়া নামে খ্যাত নাহা রোড এবং বাউন্ডারি রোডের কোচিং সেন্টারগুলো সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৌশলে কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য করে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গতকাল বুধবার গিয়েও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। দেখা গেছে, ভবন কিংবা বাসার ফটকে তালা দিয়ে ভেতরে কৌশলে এসব কোচিং বাণিজ্য চলছে।
বিকেল ৩টা থকে রাত ৮টা পর্যন্ত কোচিং চলে বেপরোয়াভাবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কোচিংয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনেরও তেমন কোনো অভিযান চোখে পড়ে না।
এদিকে, এসব কোচিং সেন্টারে আসা অভিভাবকদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আবার একাধিক অভিভাবক বলেছেন, কোচিং সেন্টার খোলা থাকলে শিক্ষার্থীরাই সেখানে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠে। অন্য বন্ধুদের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে এমন ভাবনায় শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকি নিয়েই কোচিংয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ময়মনসিংহ নগরীর বাউন্ডারি রোড, নাহা রোডসহ এর আশেপাশে প্রায় ২ শতাধিক কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার গড়ে উঠেছে। ভাড়া বাসায় গাদাগাদি পরিবেশে কোচিং করানো হয়। এখানকার পড়াশুনার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে সব সময়ই। শুধু কোচিং ব্যবসা করেই ওই এলাকায় ৫/৬ তলা ভবনের মালিক হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। এসব কোচিং ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই সরকারি আইনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধের সরকারি নির্দেশনা এলেও এরা অনেকেই এ নিয়ম মানছেন না।
জানা গেছে, নিজেদের ব্যবসা চালু রাখতে কোচিং মালিকরা ঘর কিংবা ভবনের ফটকে তালা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা ভিন্ন পথ দিয়ে ২/৩ জন করে সেই কোচিংয়ে যাচ্ছে। আবার একইভাবে বের হয়ে আসছে।
অনেক অভিভাবক দূর থেকে শিশুদের নামিয়ে দিয়ে আড়ালে চলে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে চলছে এক ধরনের লুকোচুরি খেলা। গত বুধবারও নাহা রোড এবং বাউন্ডারি রোডে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মেলেছে। তবে স্থানীয়রা জানান, বিকেল ৩টার পর রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যবসা জমে থাকে।
বাউন্ডারি রোডের স্থায়ী বাসিন্দা জেলা শ্রমিক লীগ নেতা রাকিবুল ইসলাম শাহীন। রাকিবুল ইসলাম শাহীন বলেন, এলাকার কোচিং বাণিজ্য দেখে তিনি বিস্মিত। তিনি বলেন, অনেক সেন্টারে এক ব্যাচেই ৫০ থেকে ১০০ শিক্ষার্থী পর্যন্ত রয়েছে।
এদিকে, সচেতন মহল কোচিং সেন্টারে যাওয়া অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন। একাধিক ব্যক্তি বলেন বাবা-মা যদি সন্তানকে ঝুঁকির মাঝে ফেলেন তাহলে সমাজ আর রাষ্ট্রের করার কী আছে।
বিস্ময়ের বিষয় হলো, নাহা রোড আর বাউন্ডারি রোডের এমন কোচিংয়ের হোতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপই নেই। কখনও কখনও নাম কা ওয়াস্তে কিছু টাকা জরিমানা দিয়েই খালাস পেয়ে যান কোচিং মালিকরা। যে কারণে প্রশাসনকে এরা ভয়ও পায় না। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় কোচিং চালুর বিষয়টি তাদের নজরেও এসেছে। তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন