দেশে ব্যবসায় তিনটি বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে দুর্নীতি, অদক্ষ আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায় অর্থায়নে সীমাবদ্ধতা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি বলে মনে করেন ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী।
গতকাল বুধবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ-২০২১ : উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফল’ প্রকাশ করে।
ওই জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা এমন মতামত জানিয়েছেন। জরিপ নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সিপিডি গত বছরের এপ্রিল, জুন, জুলাই—এই তিন মাস ঢাকা, চট্টগ্রাম নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ফরিদপুরের ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের ওপর এই জরিপ চালায়। এর মধ্যে ৩৯টি বড়, ১৭টি মাঝারি, ১২টি ছোট এবং পাঁচটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, দুর্নীতির পর অদক্ষ আমলাতন্ত্র ব্যবসার জন্য আরেকটি বাধা। এ ছাড়া ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, অর্থায়নে সীমাবদ্ধতাও ব্যবসার জন্য আরেকটি বড় সমস্যা।
অনুষ্ঠানে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রিপোর্ট ২০২১-২২’ প্রকাশিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমরা ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২১ : উদ্যোক্তা’ জরিপের ফলাফল শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করছি। আমরা মূলত সব খাতকে এই জরিপের আওতায় এনেছি। জরিপে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী বলছেন, ব্যবসায় দুর্নীতি বড় বাধা। আমরা তাঁদের মতামত বিশ্লেষণ করে দেখলাম, দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন ছোট ব্যবসায়ীরা। ”
সিপিডির গবেষণা পরিচালক আরো বলেন, ‘আমরা দেখছি অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হচ্ছে। তবে তা অসম গতিতে। অনেক ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী এখনো তাঁদের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারেননি। ’
জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের ৪৫ শতাংশ মনে করেন, তাঁদের ক্ষতি পোষাতে তিন বছরের বেশি সময় লাগতে পারে। তবে ৮ শতাংশ মনে করেন, অবস্থা অস্বাভাবিক না হলে এক বছরের মধ্যে ক্ষতি কাটানো যাবে।
জরিপে ব্যবসায়ীরা মতামত দেন, এই পুনরুদ্ধার সহজ ও টেকসই করার জন্য দুর্নীতি বন্ধ, করহার কমানো, অর্থায়নের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি টিকা দেওয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সিপিডির এই জরিপে করোনার সময় ব্যবসায়ী তথা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় কমানোর চিত্র উঠে এসেছে। এদের মধ্যে ২৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। ২২ শতাংশ ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে নতুন বিক্রেতার সঙ্গে কাজ করেছে। ১৯ শতাংশ ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে, ১৬ শতাংশ নতুন বাজারে গেছে, ১৫ শতাংশ নতুন পণ্য উৎপাদনে গেছে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দুর্নীতির কারণে বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন। জরিপে দেখা গেছে, ৫২ শতাংশ বড় ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দুর্নীতি তাঁদের কাছে ব্যবসার প্রধান প্রতিবন্ধকতা। আর ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ১০০ শতাংশই জানান, দুর্নীতি তাঁদের ব্যবসায় প্রধান বাধা। এ থেকে বোঝা যায়, দেশে নীতি সুবিধা বাস্তবায়নে বৈষম্য রয়েছে। ফলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের টিকে থাকার চ্যালেঞ্জও বেশি।
ব্যাবসায়িক অবকাঠামো আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে উল্লেখ করে সিপিডি বলছে, একসময় অবকাঠামো দুর্বলতা এক নম্বর সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করতেন। এখন এটি চার নম্বরে নেমে এসেছে। এর অর্থ হলো, দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। এর পরও জরিপে ৪৫ শতাংশ ব্যবসায়ী অবকাঠামো দুর্বলতাকে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সিপিডির জরিপ বলছে, করোনায় নতুন ব্যবসার সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ডিজিটাল ফিন্যান্স সেবা, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্য-প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডাটা ম্যানেজমেন্ট, রিসাইক্লিংসহ নানা খাতে ব্যবসার সম্ভাবনা দেখছেন। তবে আগামী দুই বছর বিশ্ব অর্থনীতি কেমন যাবে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। কারণ বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে গেলে বা ঋণসংকট দেখা দিলে দেশের ব্যবসাও সংকুচিত হবে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘জরিপে ব্যবসার পরিবেশ, অবকাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, সুশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা দেখা হয়েছে। ’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন