বাপ-দাদার বসতভিটা বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় প্রথমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল ওয়ারিশ সনদ প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ আত্মসাতের চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান। পরে এ ঘটনায় জালিয়াতির মামলার জেরে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তরুণীকে প্রকাশ্যে গলাটিপে হত্যাচেষ্টা করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন। এ ঘটনায় গত ৫ জানুয়ারি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীরকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী।
এবার মামলা দুটি এক সপ্তাহের মধ্যে তুলে না নিলে মামলার বাদী তানজিন সোলতানা সুমি নামের ওই এতিম তরুণীকে খুন ও গুমের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর সিকদারের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী তানজিনা সোলতানা সুমী কুতুবদিয়ায় উপজেলার আলি আকবর ডেইল ইউনিয়নের মৃত ফিরোজ আলমের মেয়ে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ এখন চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তানজিনা সোলতানা সুমীর দাবি, তার বাবার মৃত্যু পর বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার মেম্বার থাকাকালীন তাকে বাপ-দাদার ভিটামাটি বিক্রি করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার এক মাসের মাথায় সম্পদের মালিক একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজন ভুয়া ওয়ারিশকে জাল সনদ প্রদান করে। এ ঘটনায় গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর আদালতে একটি সিআর মামলা করেন।
তিনি বলেন, মামালার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন চেয়ারম্যান। একপর্যায়ে গত ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কুতুবদিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে আমার জালিয়াতি মামলার অন্যতম সাক্ষী শাহাজান সিকদারকে (৬০) মারধর করে। খবর পেয়ে আমি ওই দিন ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। এ সময় আমাকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার।
তানজিনার অভিযোগ, এ বিষয়ে এজাহার দিলেও মামলা রেকর্ড করনি কুতুবদিয়া থানা পুলিশ। পরে বাধ্য হয়ে গত ৫ জানুয়ারি আদালতে মামলার আবেদন করেন তিনি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। এরপর মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
এদিকে মামলা দুটি তুলে না নিলে এক সপ্তাহের মধ্যে তানজিনাকে আবারও গুম ও খুনের হুমকি দিয়েছেন দাবি করে গত ১৭ জানুয়ারি কুতুবদিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তানজিনা। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমাকে প্রতিদিন হুমকি দিচ্ছে। যেকোনো সময় আমাকে তারা হত্যা বা গুম করতে পারে। আমি কারো কাছে সহযোগিতা পাচ্ছি না। পুলিশ চেয়ারম্যানের পক্ষে কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে আলি আকবর ডেইলের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন, অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে ওয়ারিশ সদন একটু এদিক ওদিক হয়েছিল। পরে আমি তা আবার সংশোধন করেছি। এরপরও তানজিনা আমার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেছে।
সাক্ষীকে মারধর ও বাদী তানজিনাকে হত্যাচেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাক্ষী শাহাজান সিকদার মাদকসেবন করে সেদিন আমার ওপর হামলা করে। ওই সময় তানজিনাও হঠাৎ ঘটনাস্থলে এসে আমাকে হামলা করে। এ সময় আমার সঙ্গে থাকা লোকজন তানজিনাকে মারতে গেলে আমি বরং তাকে রক্ষা করি।
চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার আরও বলেন, আমি কখনো তানজিনাকে ভিটামাটি বিক্রির জন্য চাপপ্রয়োগ করিনি। গুম-খুনের হুমকিও দিই নাই। এরপরও সে আমার বিরুদ্ধে একের পরে এক মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ করে আমার সম্মানহানি করে যাচ্ছেন। আমি তানজিনার ভয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ঘর থেকে বেরই হচ্ছি না। এই জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ তাকে অসহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ করেন।
কুতুব দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওমর হায়দার বলেন, চেয়ারম্যানের দাবি তার ওপর হামলা করা হয়েছে। আর তানজিনা সোলতানার দাবি তাকে গলাটিপে হত্যা চেষ্টা করেছেন চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, তানজিনা চেয়ারম্যানসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে মামলার আসামিরা সবাই এখন জামিনে রয়েছে। মামলাটি এখন তদন্ত চলছে।
ওসি মুহাম্মদ ওমর হায়দার বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখন তানজিনা সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন পুলিশ চেয়ারম্যানের হয়ে কাজ করছে। আর চেয়ারম্যান সাহেব বলছে, আমি তানজিনার হয়ে কাজ করেছি। তাহলে বিষয়টি বুঝেন! আমি একজন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কারো পক্ষে নিতে পারি না।
এখন বাদীর যদি পুলিশের ওপর আস্থা না থাকলে মামলাটি অন্য সংস্থার কাছে হস্তান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন। শুধু শুধু পুলিশের ওপরে দোষ চাপানো ঠিক হচ্ছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন