১৫ বছর বয়সী কিশোরী ফারজানা। পেটের দায়ে রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার একটি বাসায় কাজ করতে এসে এখন মুমূর্ষু অবস্থায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে টয়লেটে আটকে জোর হারপিক খাইয়ে দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগে কলাবাগান এলাকা থেকে গৃহকর্ত্রী সামিয়া ইউসুফ সুমিকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় র্যাব-২ এর সদস্যরা ওই পাষণ্ড গৃহকর্ত্রী গ্রেপ্তার করে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারি কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান। তিনি জানান, গ্রেপ্তারের পর তাকে র্যাব হেফাজতেই রাখা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা ফারুকুজ্জামান বলেন, মেয়েটাকে যেভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে, তা এর আগে কখনও দেখিনি। নির্যাতনের এক পর্যায়ে মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও জানান, মেয়েটির বাবা মো. বেলাল অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে আসলে তাদের পরামর্শেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার সুমির বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন বেলাল।
নির্যাতিত গৃহকর্মী ফারাজানার বাবা মো. বেলাল সাংবাদিকদের বলেন, আমার মেয়ে সাত বছর ধরে লাবলী ম্যাডামের বাসায় কাজ করতো। করোনায় ম্যাডামের মৃত্যুর পর তার মেয়ে সুমির কাছে থাকতো। গত এক বছর ধরে সুমি আমার মেয়েকে নির্যাতন করতো।
ভুক্তভোগী মেয়ের বরাত দিয়ে বাবা বলেন, আমার মেয়ের কোনো ভুল হলেই মারধর করতো। কয়েকদিন আগে আমার মেয়েক টয়লেটে আটকে রেখে উলঙ্গ করে নির্যাতন করে। তারপর হারপিক খাইয়ে দিয়েছিল। কিছু হলেই সুমি ও তার ভাই হিরন নির্যাতন চালাতো। আমাদের সঙ্গে দেখা করতে দিত না। আমরা দেখা করতে আসলে ভেতরে ঢুকতে দিত না। শুধু মোবাইল ফোনে কথা বলতে দিত। আর মোবাইলে নির্যাতনের কথা না বলার জন্য ভয় দেখানো হতো।
তিনি আরও বলেন, গত ১৪ জানুয়ারি ফারজানাকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং পা দিয়ে পেটে পাঁচ-ছয়টি লাথি মারে। এর ফলে মেয়েটি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর জখম অবস্থায় ভর্তি করা হয়।
দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক বেলাল জানান, রাজমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। একটি দুর্ঘটনায় তার পা ভেঙ্গে যাওয়ায় তিনি মেয়েকে কাজে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায়। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফারজানার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পূর্বপশ্চিম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন