অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ভর্তুকি ব্যয় আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। আগামী অর্থবছরের জন্য ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রাথমিক প্রাক্কলন করেছে মন্ত্রণালয়। তবে চূড়ান্ত বাজেটে এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সার, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে এবং তা সমন্বয় করা না হলে বাজেটে এই ব্যয় আরো বাড়ানো ছাড়া সরকারের কাছে কোনো উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
জনগণের করের টাকা দিয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়। তাই ভর্তুকির সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আইএমএফের মতে, ভর্তুকির টাকা কমানো গেলে সরকার তা অন্য উন্নয়নকাজে ব্যয় করতে পারে। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভর্তুকির পরিমাণ না বাড়ালে কৃষিপণ্য, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আরো বাড়বে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। তাই সামনের দিনগুলোতে ভর্তুকির পরিমাণ আরো বাড়ানোর পক্ষে মন্ত্রণালয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে কৃষি, রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে সব মিলিয়ে ৪৮ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের প্রায় ৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ। বাজেটে এটি দেখানো হয়েছে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ হিসেবে। গত অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯-২০-এর বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।
বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকায় গত ৩ নভেম্বর দেশেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। এবার সরকার চাচ্ছে ভর্তুকি কমানোর লক্ষ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়াতে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে যুক্তি হলো, এই তিন পণ্যের দাম সমন্বয় বা বৃদ্ধি করা না হলে বাজেটে ভর্তুকি ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে, যার পরিমাণ হতে পারে জিডিপির ২ শতাংশ।
সর্বশেষ নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৬২ হাজার ৪৬.২০ কোটি টাকার পুঞ্জীভূত ক্ষতির মুখে পড়ে। পিডিবি সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সংস্থাটি আরো প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
সরকারি কেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি ভাড়াভিত্তিক, দ্রুত ভাড়াভিত্তিক, আইপিপি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনে পিডিবি। এ ছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতেও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়েনি। ফলে এই খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়তি থাকায় ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। গত নভেম্বরে এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখতে আরো ৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছিল পেট্রোবাংলা।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, সারে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। আর এলএনজিতে ভর্তুকি প্রয়োজন হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। যদিও শেষ পর্যন্ত কৃষকদের ওপর বাড়তি চাপের কথা বিবেচনা করে সারের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসতে পারে সরকার, তার পরও চলতি অর্থবছরই আরো বাড়তি ৪৫ হাজার কোটি টাকা লাগার আশঙ্কা করছে সরকার। এ হিসাব সারের বাড়তি দাম বাদ দিয়ে। এরই মধ্যে কৃষি, বিদ্যুৎসহ পাঁচ মন্ত্রণালয় এই পরিমাণ টাকা চেয়ে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় সারের দাম ঠিক রাখতে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ভর্তুকি চেয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ১১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন