প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিতে গিয়ে অনেকেই ঝামেলায় পড়েছেন। অনেক কসরতের পর কারও কারও আঙুলের ছাপ মিললেও কেউ আবার ভোট দিতেই পারেননি। আজ রোববার নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট পড়ার হারও কম।
কেন্দ্রে আসা মো. নওশাদ নামের এক ভোটার প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি ভোট দিতে এসেছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর সোয়া ১২টায় ভোটকক্ষে ঢুকতে পারলেও তিনি ভোট দিতে পারেননি। নওশাদ বলেন, ‘আঙ্গুল নাকি ক্ষয় হইয়া গেছে। আঙ্গুলের ছাপ দিলে নাম আসে না।’
আবার ৯৩ বছরের বৃদ্ধা দিলজান ভোট দিতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘অফিসার দেখাইয়া দিসে। আমি ভোট দিসি।’ প্রমাণ হিসেবে তিনি তাঁর আঙুলে থাকা অমোচনীয় কালি দেখান।
ইভিএম পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ মেলাতে সমস্যা হচ্ছে বলে কেন্দ্রটির ভোটাররা অভিযোগ করেছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁরা বিরক্ত। প্রথম চার ঘণ্টায় নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। একই বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২৮ শতাংশ।
ভোট দিতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকেও ভোটারের সঙ্গে বুথের গোপন কক্ষে ঢুকতে দেখা যায় নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রে। দুপুর পৌনে ১২টায় পুরুষ কেন্দ্রটির ২ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষটির গোপন বুথে একই সঙ্গে দুজন ঢুকছেন। এই প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে কারণ জানতে চাইলে বুথে থাকা দুজন বের হয়ে আসেন। তাঁদের একজন নিজেকে কক্ষের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মানুষ ভোট দিতে পারছে না। দেখিয়ে দিতে হচ্ছে। ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত।’ গোপন বুথে ঢোকা উচিত কি না, তা জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বলেন, ‘মানুষরে সাহায্য করলেও দোষ নাকি?’
এই ওয়ার্ডের ঠেলাগাড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কাউসার কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে ইভিএমে ধীরগতির কারণে শেষ পর্যন্ত ভোটারদের ভোট না দিয়েই ফিরে যেতে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সব কটি কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি ভালো। কিন্তু সে অনুযায়ী ভোট কাস্ট হচ্ছে না। কারও আঙুলের ছাপ মেলে না, কেউ চোখে দেখে না, আবার অনেক বয়স্ক মানুষ পদ্ধতিটাই বুঝে উঠতে পারছে না। ভোট না দিয়ে ফিরে গেলে কিংবা চারটা পর্যন্ত সবার ভোট না নেওয়া গেলে সেটা মন্দ হবে।’
পুরুষ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, যতক্ষণ ভোটার আছে, ততক্ষণ ভোট চলবে। নানান কারণেই কিছুটা ধীরগতিতে ভোট হচ্ছে। ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সে কারণে হয়তো কখনো কখনো গোপন কক্ষেও যেতে হচ্ছে।
নারী কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আসিফ হাসান বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইভিএমে অভ্যস্ত না হওয়ায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। শীতকাল হওয়ায় আঙুলের আর্দ্রতা কম। ইভিএমে ছাপ পড়ছে না। তা ছাড়া বয়স্করা নারীরা প্রক্রিয়াটা বুঝতে পারছেন না।
..........................................................................................জামাতা প্রার্থী, শ্বাশুড়ি না পারছেন ভোট দিতে, না পারছেন কেন্দ্র ছাড়তে.....................................................................
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়েছেন এস এম মোজাম্মেল হক। প্রতীক লাটিম। জামাতাকে ভোট দিতে শহরের আদর্শ স্কুল নারী কেন্দ্রে এসেছেন তাঁর শাশুড়ি ফরিদা ইয়াসমিন। তবে আঙুলের ছাপ না মেলায় আজ রোববার সকাল থেকে বারবার চেষ্টা করেও তিনি ভোট দিতে পারেননি। আবার জামাতাকে ভোট না দিয়ে তিনি বাড়িও যেতে পারছেন না।
আদর্শ স্কুল নারী কেন্দ্রে দেখা গেল, ফরিদা ইয়াসমিন তিন দফা চেষ্টা করেও আঙুলের ছাপ মেলাতে পারেননি। একটা নিশ্চিত ভোটের জন্য উদ্বিগ্ন প্রার্থী মোজাম্মেল হক প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে কিছু একটা করার অনুরোধ করছিলেন। একপর্যায়ে পোলিং কর্মকর্তাকে নিজের আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোটটি নেওয়ার নির্দেশ দেন। পোলিং কর্মকর্তা তখন আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট দেওয়ার উদ্যোগ নেন। কিন্তু তাঁর আঙুলের ছাপও নিচ্ছিল না।
পোলিং কর্মকর্তা বলেন, নিজের আঙুলের ছাপ দিয়ে ৩-৪টা ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এখন আর কাজ হচ্ছে না।
ফরিদা ইয়াসমিনকে দুপুরেও কেন্দ্রে অবস্থান করতে দেখা যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেয়ে ও জামাতা।
চতুর্থবারের মতো চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারেননি ফরিদা ইয়াসমিন
চতুর্থবারের মতো চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারেননি ফরিদা ইয়াসমিনছবি: প্রথম আলো
এই কেন্দ্রে এর আগেও আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে না পারার একাধিক অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। তখন কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হাত ধুয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন ভোটারদের। হাত ধুয়ে, জেল মেখেও আঙুলের ছাপ মেলাতে না পেরে অনেক ভোটার ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন।
এদিকে একই কেন্দ্রে নাতির সঙ্গে এসেছিলেন রশিয়া বেগম। তাঁর আঙুলের ছাপও মিলছিল না। বারবার হাত ধুয়ে, ভেসলিন মাখিয়েও কাজ হয়নি। আধা ঘণ্টা সেখানে থেকে তিনি ভোট না দিয়েই চলে যান। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ মানুষ আর কত থাকব?’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন