রাজনৈতিক নানা মেরুকরণে জমে ওঠা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্যও কঠিন অগ্নিপরীক্ষা। কারণ রাজধানীর কাছের এই বাণিজ্যিক নগরীর জনপ্রতিনিধি নির্বাচন কেএম হুদা কমিশনের সক্ষমতা প্রমাণের সর্বশেষ সুযোগ বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ এই সিটি নির্বাচনের পরে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে বিদায় নেবে বর্তমান কমিশন। তাই মেয়াদের শেষ সিটি নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে সেদিকে দৃষ্টি সকলের। যদিও নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, অতীতের রেকর্ড পর্যালোচনায় নাসিকে ভালো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইসির সদিচ্ছা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে আগামী ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জে পর্যবেক্ষণে যাবেন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, এটাই আমাদের সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং আইনানুগভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় আমরা সে জন্য সব প্রকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান আমাদের সময়কে বলেছেন, অতীতের রেকর্ড দেখলে বর্তমান কমিশনের ওপর ভরসা পাই না। তারা নতুন কথা শিখছেÑ সহিংসতার দায় তাদের না। এটা বলার মধ্য দিয়ে তারা দায় এড়িয়ে যেতে চাইছে। একজন সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে এটা তারা বলছেন, কিন্তু তাকে কোনো প্রকার সতর্ক না করে উল্টো বলছেন- তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেননি। এটা কেমন কথা? রাষ্ট্রীয় স্বাধীন প্রতিষ্ঠান এভাবে দায়সারা মন্তব্য করতে পারে না।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করে না। তারা শুধু ব্যালট পেপার পাঠায় আর লোকজন নিয়োগ দেয়। স্থানভেদে নিজেরা নিজেদের মতো ভোট করে নেয়। সুতরাং বর্তমান ইসির প্রথম আর শেষ ভোট বলে কোনো কথা নেই। ইউপি নির্বাচনে এত মানুষ মারা গেল, তারা দায় চাপিয়ে দিচ্ছে প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর। তা হলে তাদের কাজ কি? তারা দায় এড়াতেই এসব বলে যাচ্ছেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, এই নির্বাচনে কোনো চমক থাকবে কিংবা কমিশন তেমন কিছু করবে বলে মনে হয় না। আর একশ নির্বাচনের মধ্যে ৯০টা খারাপ করে একটা ভালো করলে তাতে কী প্রমাণ হয়? মানে আপনি ভালো করতে পারেন না, নয়তো পারেন। কিন্তু আপনি করেন না। অতীতে উদাহরণ দেখলে বলব, এই নির্বাচনও বর্তমান কমিশন ভালো করতে পারবে না। তবে অতীতে কিছু এলাকায় ভালো নির্বাচন হয়েছে। সেখানে প্রশাসনের সম্পৃক্ততা ভালো ছিল। তারা চাইলে ভালো নির্বাচন করতে পারে। তবে তারা করছে না। তাদের ভালো কিছু করতে চাওয়া নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই নির্বাচনে নিয়ন্ত্রক হবেন কাউন্সিলররা। এখানে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টি দেখছি, সহিংসতা দেখছি না। তবে ভোট কারচুপির ব্যাপারে শঙ্কা রয়েছে। কিছু জায়গায় এটি কাউন্সিলরদের মাঝে দেখা যেতে পারে। নির্বাচনে আইভী-শামীম দ্বন্দ্ব ফ্যাক্টর হবে। জনগণ চায় তাদের জীবন যেন সহিংসতামুক্ত থাবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় তারা।
আগামী ১৬ জানুয়ারি ৫ লাখ ১৭ হাজার ভোটারের নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিল পদে ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপির পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের মধ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এই নির্বাচনের উত্তেজনা নারায়ণগঞ্জের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান ও নৌকার প্রার্থী আইভীর মধ্যকার বাহাস নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়িয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্যোগে পরিস্থিতি দৃশ্যত নিয়ন্ত্রিত মনে হলেও চলছে নানান গুঞ্জন। সুষ্ঠু ভোট নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। যদিও সিইসি কে এম নুরুল হুদা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের ভোটের পরিবেশ নিয়ে তিনি শঙ্কার কিছু দেখছেন না। আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের মানুষ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট দিতে পারবে বলে তার বিশ্বাস।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে ইউপি নির্বাচনের শেষ ধাপ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। তার আগে ১৬ জানুয়ারি বর্তমান কমিশনের সর্বশেষ সিটি নির্বাচন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন