প্রযুক্তিগত (আইবাস প্লাসপ্লাস) জটিলতার কারণে ভাতার টাকা পায়নি ৬০ লাখ উপকারভোগী। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরের ভাতা পেয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ উপকারভোগী।
মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা হচ্ছে ৭৫ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ৬০ লাখের কাছেই টাকা পৌঁছায়নি। কোথায় সমস্যা, তা চিহ্নিত করতে সমাজসেবা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইসিটি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে দ্রুত ভাতা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সঠিক ডেটাবেজ তৈরি করতে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বলা হয়। জরুরি ভিত্তিতে এই ডেটাবেজ ‘আইবাস প্লাসপ্লাস’ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর জন্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
প্রসঙ্গত, ‘আইবাস প্লাসপ্লাস’ (ইনটিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস সিস্টেম) একটি অনলাইন সফটওয়্যার, যা দিয়ে ক্রমান্বয়ে সব ধরনের বিল দাখিল এবং বাজেটারি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করা যায়। যে কোনো বিল ও অর্থ দাখিল, জমা ও প্রদান সহজীকরণ করতে চালু করেছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ খান খসরু যুগান্তরকে বলেন, আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সব ধরনের ভাতা দেওয়া হয়েছে। এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। প্রযুক্তি আইবাস প্লাসপ্লাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে মোবাইল ফোনে ভাতা যাচ্ছে। নতুন একটি সিস্টেম চালু হলে কিছু ভুলত্রুটি থাকে, এখানেও তাই হয়েছে। তবে সবাই ভাতার টাকা পাবে, কেউ বাদ পড়বে না। ভাতাভোগীর কেউ কেউ নিজের মোবাইল ফোন নম্বর না দিয়ে পরিবারের অন্য কারও নম্বর দিয়েছেন। অনেকে নামে ভুল করেছেন। নানা অসংগিতর কারণে এ সমস্যা হয়েছে। আশা করছি এটি ঠিক হয়ে যাবে।
চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) ১ কোটি ২২ লাখ ৮১ জনকে নানা ধরনের ভাতার আওতায় এনে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ৫৭ লাখ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা পাচ্ছেন ২৪ লাখ ৭৫ হাজার, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে ২০ লাখ জনকে। এছাড়া হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর এমন ৮৬ হাজার নাম ভাতার তালিকায় আছে। দারিদ্র্য মা ৭ লাখ ৭০ হাজার, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা পৌনে তিন লাখ, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২ লাখ এবং অবসরোত্তর পেনশনার সুবিধা পাচ্ছেন ৭ লাখ ৫৩ হাজার মানুষ। এসব ভাতাভোগীর জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৯ হাজার ৬৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। গত অর্থবছর থেকে ভাতার টাকা আইবাস প্লাসপ্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিতরণ শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাঠাতে গিয়ে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের কাছে টাকা পৌঁছায়নি। এ নিয়ে ১৫ নভেম্বর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব সুলতানা সাঈদার (বাজেট ও ব্যবস্থাপনা) সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়েছে। এতে সমাজসেবা অধিদপ্তর, এটুআই-এর প্রতিনিধি, আইবাস প্লাসপ্লাসের সিনিয়র ফাংশনাল পরামর্শক, মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সমাজসেবা অধিদপ্তর তাদের তথ্য উপস্থাপন করে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরের ভাতা সবাই পাননি। অথচ ৭৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৬৪ জন উপকারভোগীর মোবাইল ফোন ও ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর জন্য পে-রোল অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে আইবাস প্লাসপ্লাসে পাঠানো হলে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭৩ জনের হিসাবে অর্থছাড় করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৬০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৯১ জনের হিসাবে অর্থছাড় করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে এক মাস পার হয়ে গেছে। জটিলতার কারণে উপকারভোগীর অনুকূলে যথাসময়ে টাকা পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে ওই বৈঠকে জানানো হয়।
ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরকে উপকারভোগীদের সঠিক ডেটাবেজ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিমাসের ৭ তারিখের মধ্যে নয়, টোকেন জেনারেট করতে হবে ১০ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে। এ বৈঠকেই চলতি অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে উপকারভোগীর সঠিক ডেটাবেজ প্রস্তুত করে আইবাস প্লাসপ্লাসে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট ও ব্যবস্থাপনা) সুলতানা সাইদা যুগান্তরকে বলেন, উপকারভোগীদের কাছে দ্রুত টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জটিলতা নিরসনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠক করে সমস্যা শনাক্ত এবং তা নিরসন করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে ১ লাখ ২৪ হাজার ভাতাভোগীর অর্থ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির কর্মসূচির ভাতা দেওয়া যায়নি। এজন্য বরাদ্দকৃত টাকা ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) সিস্টেম বাউন্স বেক করে অধিদপ্তরে ফেরত এসেছে।
পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের ডেটা সংশোধন করে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৯৩ হাজার জনের টাকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকিদের টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন