দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতো রাজধানীর পান্থপথে দৈনিক প্রথম আলোর সাবেক কর্মী আহসান কবির খানকে চাপা দেওয়া উত্তর সিটি করপোরেশনের ডাম্প ট্রাকটির চালকও ছিলেন সুইপার। গাড়িটির মূল চালক ছিলেন রুবেল উদ্দিন নামে করপোরেশনের এক কর্মী। কিন্তু গাড়িটি চালাতেন ফটিক নামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক সুইপার। তিনি ডিএনসিসির বৈধ কর্মীও নন।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে আহসান কবিরকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় ফটিক। উপস্থিত জনতা তাকে ধাওয়া দিলে পান্থপথ সিগন্যালে গিয়ে গাড়িটি রেখে পালিয়ে যায় সে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এসএম শফিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাড়িটি যান্ত্রিক বিভাগের। তবে সে আমাদের বৈধ চালক কিনা তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।’
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাড়িটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নয়। এটি যান্ত্রিক বিভাগের। চালকও সেই বিভাগের।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য একাধিকবার ফোন করলেও ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম কল রিসিভ করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, দক্ষিণ সিটির মতো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও চালকের সংকট রয়েছে। ক্লিনার-পিয়নদের দিয়ে গাড়ি চালানো হয়। রয়েছে বহিরাগত চালকও। বৈধ চালকরা তাদের গাড়ির চাবি অন্যদের দিয়ে দেন। তারা তেল চুরি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারাও জড়িত। বৈধ চালক নিয়োগেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে কোনও তদারকিও নেই।
এদিকে এই ঘটনার আগের দিন বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ময়লার গাড়ি। সেই গাড়ির চালক ছিলেন ক্লিনার। তার নাম রাসেল (২৬)। গাড়িটির মূল চালক ছিলেন হারুন মিয়া। তাকে খুঁজে পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, তাদের মতো এমন আরও ৫ শতাধিক গাড়িচালক রয়েছে, যারা ক্লিনার ও পিয়ন হিসেবেই নিয়োগপ্রাপ্ত। আর বেশ কয়েকজন রয়েছেন যারা অন্যের বদলি হিসেবে গাড়ির ডিউটি করেন।
এদিকে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত আহসান কবীর খানের (৪৫) বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাতক চালকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এসএম শরিফ-উল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নিহতের পরিবারের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা করা হবে।’
এদিকে এই দুর্ঘটনার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক সরেজমিন তদন্ত করে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএনসিসির সচিব (যুগ্ম-সচিব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এসএম শরিফ-উল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) মো. মিজানুর রহমানকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলমকে সদস্য করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন