দুই যুগের বেশি সময় ধরে পদোন্নতি পাচ্ছেন না ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত অ্যাসিসটেন্ট টাউন সাব-ইনস্পেকটর (এটিএসআই) ও টাউন সাব-ইনস্পেকটররা (টিএসআই)। এ দুই পদে চাকরি করে পদোন্নতি ছাড়াই গভীর হতাশা নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন অনেকে।
নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়া এবং শূন্যপদ না থাকায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরও পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম রেঞ্জে এ ধরনের দুই শতাধিক কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আর সারা দেশে এ সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ২০০। নতুন পদ সৃষ্টি করা না গেলে টিএসআই ও এটিএসআইদের পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে সূত্রগুলো জানায়।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীতে সবচেয়ে অবহেলিত পদ এটিএসআই ও টিএসআই। এ দুই ক্যাটাগরির পদে বছরের পর বছর চাকরি করেও পদোন্নতির দেখা পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ১৫ থেকে ৩০ বছর একই পদে কর্মরত থেকে অবসরে যাওয়ার নজিরও আছে।
এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। সম্প্রতি পুলিশবাহিনীতে যেসব নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে, সেখানেও টিএসআই পদ রাখা হয়নি। পদ অনুযায়ী টিএসআইদের দায়িত্ব পালন করার কথা পুলিশ ফাঁড়িতে। কিন্তু তারা কাজ করছেন ট্রাফিক পুলিশে। ফাঁড়িগুলো ব্যবহার করছে থানা পুলিশ।
১৯৮৩ সালে পুলিশ কনস্টেবল হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন লিটন কান্তি নাথ (ছদ্মনাম)। অ্যাসিসটেন্ট টাউন সাব-ইনস্পেকটর (এটিএসআই) পদে পদোন্নতি পান ১৯৯৮ সালে। ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি টিএসআই (টাউন সাব-ইনস্পেকটর) পদে পদোন্নতির জন্য ১১ বারের বেশি পরীক্ষায় অংশ নেন এবং প্রতিবারই পাশ করেন।
কিন্তু পদোন্নতি আর ভাগ্যে জোটেনি। তিনি ২০২৩ সালে অবসরে যাবেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে করতে হয়রান হয়ে গেছি। এখন আর পরীক্ষায়ও অংশ নিই না। কারণ আর পরীক্ষা দিয়ে লাভ নেই। ছোট চাকরি করি।
পোড়া কপাল। আমাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। আশা ছিল, একদিন ইনস্পেকটর হব। কিন্তু এখন আর সেই স্বপ্ন নেই। এভাবে এক যুগ থেকে দেড় যুগের বেশি সময় পদোন্নতিবঞ্চিত আছেন পুলিশের ২ হাজারের বেশি।
পুলিশের মহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সচিব কমিটিতে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে অ্যাসিসট্যান্ট টাউন সাব-ইনস্পেকটর (এটিএসআই) ও টাউন সাব-ইনস্পেকটর (টিএসআই) পদ বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়।
এটিএসআই পদকে সহকারী সার্জেন্ট আর টিএসআই পদকে সার্জেন্ট হিসাবে নতুন নামে করার প্রস্তাব করা হয়। সচিব কমিটি ২৫ অক্টোবর এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়। এছাড়া কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী সার্জেন্ট এবং হওয়ার সুযোগ রাখতে বলা হয় প্রতিবেদনে।
এছাড়া সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ সহকারী সার্জেন্ট থেকে পদোন্নতি পরীক্ষার মাধ্যমে আর ৭০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সচিব কমিটির কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।
কয়েকজন এটিএসআই যুগান্তরকে জানান, তারা সবাই কনস্টেবল হিসাবে চাকরিতে প্রবেশ করেন। বিভাগীয় পরীক্ষা দিয়ে এটিএসআই পদে পদোন্নতি পান। এটিএসআই থেকে টিএসআই হতে গেলে প্রতিবছর ডিসেম্বরে পরীক্ষা দিতে হয়।
পরীক্ষায় পাশ করলে পরবর্তী ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের প্রমোশন বা পদোন্নতি হওয়ার নিয়ম। কিন্তু সেই প্রমোশন আর হয় না। ফলে প্রমোশনের জন্য পরের বছর আবার পরীক্ষা দিতে হয়। তাছাড়া টিএসআই থেকে টিআই হওয়ারও সুযোগ রাখা হয়নি।
সরাসরি পুলিশ সার্জেন্ট থেকেই টিআই বা টাউন ইনস্পেকটর নিয়োগ দেওয়া হয়। অবস্থা এমন হয়েছে যে, অবহেলিত এটিএসআই ও টিএসআইদের দিকে তাকানোর বা তাদের দুঃখ বোঝার যেন এখন আর কেউ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশবাহিনীতে এএসআই (অ্যাসিসটেন্ট সাব-ইনস্পেকটর) ও এটিএসআইরা একই সুযোগ-সুবিধা ও বেতনভাতা ভোগ করেন। কনস্টেবল থেকে বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পদোন্নতি পেয়ে এএসআই থেকে এসআই, এসআই থেকে পরিদর্শক এবং পরিদর্শক থেকে এএসপি বা এসি পদেও পদোন্নতি পান।
একইভাবে কনস্টেবল থেকে এটিএসআই, এটিএসআই থেকে টিএসআই, টিএসআই থেকে পুলিশ পরিদর্শক হওয়ার কথা। কিন্তু শূন্যপদ না থাকার কারণে বছরের পর বছর টিএসআই ও এটিএসআইরা বঞ্চিত হয়ে আসছেন। অথচ পদোন্নতির জন্য প্রতিবছরই পরীক্ষা নেওয়া হয়। কোনো টিএসআই অবসরে গেলেই কেবল ওই শূন্যপদে এটিএসআইদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন