ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নে ‘বারফা’ নামে একটি গ্রাম আছে। যার মোট ভোটার সংখ্যা ৭৮০। জনসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। বেশিরভাগ মানুষের পেশা কৃষি। কাকডাকা ভোরে তারা নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে যান। আবার দিন শেষে ঘরে ফেরেন। রাত হলেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
কিন্তু ওই গ্রামের মানুষদের মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে একটি পরিবারের বিরুদ্ধে। এ পর্যন্ত ৩৫ মামলায় প্রায় ৩০০ নারী-পুরুষকে আসামি করা হয়। ফলে গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মামলায় অভিযুক্তরা।
অভিযোগ আছে, ওই গ্রামের মো. শামসুর রহমান ও মোস্তফা কামাল সুমন নামের দুই ভাই এসব মামলা করছেন। এর আগে তাদের বাবা আফছার বিশ্বাস গ্রামের মানুষদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, তার কাছ থেকে সুদে নেওয়া টাকার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে একাধিক পরিবার।
অভিযুক্ত এ পরিবারের করা মামলা থেকে রক্ষা পেতে সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া ওই গ্রামের নারী-পুরুষ প্রতিবাদে জুতা ও ঝাড়ু মিছিলও করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আশরাফুল ইসলাম খোকন নামের এক বাসিন্দা বলেন, প্রকৃতপক্ষে শামছুর রহমান এলাকায় একজন চিহ্নিত ঠান্ডা মাথার প্রতারক ও মামলাবাজ। তার প্রতারণার শিকার গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। সম্প্রতি সরকারি রাস্তার জায়গায় তিনি অবৈধভাবে ঘর করে মানুষ চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। এরই মধ্যে গ্রামবাসী বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন।
খোকন আরও বলেন, আপনারা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন প্রতারক শামছুর রহমানের বাবা কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নেই। এরপরও তারা মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেন। তারা ভুয়া তথ্য দিয়ে আমাদের যেমন হয়রানি করছে, তেমনি জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধাদেরও ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার স্বীকার গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুল আজিজ বিশ্বাস, হযরত মন্ডল, তার আপন চাচাতো ভাই নজরুল বিশ্বাস, ইকবাল মন্ডল, নজরুল মন্ডলসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা রুবেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। দিন আনি দিন খাই। আমার বাবা অভাবে পড়ে তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। এ টাকার সুদ দেওয়ার পরও একমাত্র সম্বল ভিটাবাড়িসহ ১৬ শতক জমি লিখে নেয় শামছুর রহমানের পরিবার।
এ ব্যাপারে জানতে শামছুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি। তবে তার ভাই মোস্তফা কামাল সুমন বলেন, আমাদের গ্রামে অনেক জমি আছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ তা দখল করে রাখে। যে কারণে কিছু কিছু মানুষের নামে মামলা দিতে বাধ্য হয়েছি।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি থানায় নতুন এসেছি এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে শুনেছি গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে থানায় কয়েকটি মামলা হয়েছিল। এরপর থানায় আর মামলা নেওয়া হয়নি। তবে কোর্টে গিয়ে তারা মামলা করতে পারেন। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন