চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার রাতের কোনো এক সময় উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সম্পত্তি ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে নির্মম এ খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পরিবারের বড় ছেলে সাদেক হোসেন ওরফে সাদ্দাম (২৭) ও তার স্ত্রী আইনুন নাহারকে আটক করেছে জোরারগঞ্জ থানা-পুলিশ।
মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ জানিয়েছে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।
আটক হওয়া সাদ্দাম এলাকাবাসী ও পুলিশকে তাদের বাড়িতে ডাকাতরা হামলা চালিয়েছে বলে সকলকে বোঝাতে থাকেন। ডাকাতের আঘাতে তিনজন মারা গেলেও সাদ্দামের গায়ে একটি আঁচড়ও লাগেনি। একইভাবে সাদ্দামের স্ত্রী সন্তানও অক্ষত ছিল। এসব দেখে ও তার আচার আচরণে সাদ্দামকে সন্দেহ হয়। ফলে তাকে আটক করা হয়।
নিহতরা হলেন, স্থানীয় নতুন বাজারের মুদি ব্যবসায়ী নুরুল মোস্তফা সওদাগর (৭১), তার স্ত্রী জোসনা আক্তার (৫৫) ও তাদের মেজ ছেলে আহমদ হোসেন (২৫)।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সম্পত্তি ভাগ–বাঁটোয়ারা নিয়ে দীর্ঘ ৩ বছর যাবৎ নুরুল মোস্তফার সঙ্গে তার বড় ছেলের বিরোধ চলছিল। মেজ ছেলে, স্ত্রী এবং একমাত্র মেয়ের নামে সম্পত্তির দলিল করে দেয় মোস্তফা। এরপর থেকে বিরোধের সূত্রপাত।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনির আহাম্মদ ভাসানী জানান, নিহত মোস্তফা সওদাগর তার বাড়ির ১২ শতক জায়গার মধ্য থেকে মেজ ছেলে নিহত আহমদ হোসেনকে ৪ শতক জায়গা লিখে দেন। বড় ছেলে এর প্রতিবাদ করেন। অপরদিকে মেজ ছেলে নিহত আহমদ হোসেনের আগে ছোট ছেলে আলতাফ হোসেন পরিবারের অ-মতে বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করেন। বাবা মা ওই বিয়ে মেনে নেয়নি, বউকে ঘরেও তুলে নেয়নি। এসব নিয়ে তাদের পারিবারিক কলহ চরমে পৌঁছে।
ভাসানী আরও জানান, আজ শুক্রবার নিহত আহমদ হোসেনের বিয়ের দিন তারিখ (ফর্দ) হওয়ার কথা ছিল। বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ধুমধাম করে বিয়ে করাবেন। কারণ নিহত আহমদ হোসেন তার বাবা মায়ের দেখভাল করতেন। বাবা মা তার ওপর খুশি ছিলেন। এসব বিষয় নিয়েও বড় ছেলের সঙ্গে কলহ চলছিল বলে জানা গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানা-পুলিশ, এরপর পিআইবি ও চট্টগ্রাম সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের ডিএনএ ও হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
বেলা প্রায় সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মোহাম্মদ লাবিব আব্দুল্লাহ উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
তিনি বলেন, ‘আটককৃত সাদ্দাম বাড়িতে ডাকাতির কথা জানালেও আমরা বাড়ির ভেতর ডাকাতির কোনো আলামত পাইনি। ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র গুছানো ছিল। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি পারিবারিক বিরোধ বিশেষ করে সম্পত্তি ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে নির্মম এ খুনের ঘটনা ঘটেছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন