গত কয়ে কদিনে রাজধানীর কয়েকটি ফুটপাত ও ঝোপঝাড় থেকে চার নবজাতককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে দুটি জীবিত এবং দুটি শিশু ছিল মৃত। ডাস্টবিন, ফুটপাত, ঝোপ ও শৌচাগার; এসবই যেন অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুগুলোর ঠিকানা হয়ে উঠছে ক্রমে। সকরুণ কান্নার শব্দে আঁতকে ওঠা লোকজন দ্রুত উদ্ধার করে কাউকে নিয়ে যায় হাসপাতালে, তুলে দেয় প্রশাসনের জিম্মায়। সেখান থেকে পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে একটা সত্যিকারের আশ্রয়ের সন্ধান পায় হতভাগা শিশুটি। আর মৃত উদ্ধার হলে স্থান হয় মর্গে। এরপর পুলিশ দায়ের করে হত্যা মামলা। কিন্তু আসামি কে? কেউ ধরা পড়েছে এ পর্যন্ত? উত্তর হলো ‘না’।
নবজাতকের সঙ্গে এমন পাষণ্ড মা কিংবা বাবার একটা বড় সূত্র কিন্তু থেকেই যায়। তা হলো ডিএনএ। ওটার সূত্র ধরেও এ পর্যন্ত এমন কাউকে ধরা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা নবজাতকের পরিচয় ও খুনি শনাক্তে তাদের তদন্তের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের ডিএনএ ব্যাংক নেই। কেবল নবজাতকের ডিএনএ রাখলে তো হবে না। সকল নাগরিকের ডিএনএ থাকলে ম্যাচিং করতে পারতো। কিন্তু কেবল নবজাতকের ডিএনএ সংরক্ষণ করে লাভ নেই। আমাদের দেশের পরিচয়হীন বয়স্ক তো দাফন করা হয় অজ্ঞাত হিসেবে। অনেক সময় বছর ধরে ফ্রিজে রাখা হয় পরিচয় না পেয়ে। এমন লাশও আছে ডিএমসিতে। বয়স্কদের আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র খোঁজা হয়। কিন্তু নবজাতকদের সেই পদ্ধতিও থাকে না।
তিনি আরও বলেন, নবজাতক ফেলে দেওয়া বা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো পরিবারের মাধ্যমেই ঘটে। তাই কখনও কেউ অভিযোগ নিয়েও আসে না। পুরো বিষয়টি থাকে সূত্রহীন। ব্যাগে, বস্তায়, কার্টন, বালতিসহ বিভিন্ন কায়দায় গোপনে এসব কাজ করে। যা তদন্ত খুবই চ্যালেঞ্জিং।
সূত্র না মিললে আগায় না তদন্ত। নিহত নবজাতকদের ক্ষেত্রে হত্যা মামলা হলেও বছরের পর বছর সেই মামলার কোনও অগ্রগতি হয় না। তবে পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি ঘটনারই তদন্ত হয়।
পরিত্যক্ত অবস্থায় নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রতিটি ঘটনাতেই হত্যা মামলা করে। এসব মামলা তদন্তে দীর্ঘ সময় লাগে। অভিযোগপত্রও হয় নগণ্য।
ঢাকার রাস্তায় প্রতিবছর এমন কত নবজাতক পাওয়া যায়, তার পরিসংখ্যান নেই কোনও সংস্থা বা মানবাধিকার সংগঠনের কাছে। জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এই সংশ্লিষ্ট খবর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গেছে, গড়ে প্রতি মাসে অন্তত একটি নবজাতক পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, ‘জন্মের পর একটি নবজাতকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে, যা সকল নিষ্ঠুরতাকে হার মানায়। জন্মের পরই সে নির্মমতার শিকার হয়। এটা কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গুরুতর অপরাধ।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন