আগামী বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ লোককে টিকার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত কভিডবিষয়ক সম্মেলনে এ কথা জানান। ওই সম্মেলনে জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসসহ আরো অনেকে বক্তব্য দেন।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বকে আরো ৫০ কোটি ডোজ ফাইজার-বায়োএনটেক টিকা অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানের টিকা ১০০ কোটি ছাড়াবে। এই টিকাগুলো নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে দেওয়ার কথা বলেছেন বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আগামী বছরের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছেন।
কভিড প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) মহামারিকে পরাজিত করতে হলে সর্বত্র একে’পরাজিত করতে হবে।
টিকা নিয়ে অঙ্গীকার করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে একটি টিকার বিপরীতে বাকি বিশ্বে তিনটি করে টিকা দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখন অঙ্গীকারবদ্ধ।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন উচ্চ আয়ের অন্য দেশগুলোরও টিকা অনুদান ও অঙ্গীকারের ওপর জোর দেন। তিনি এ ক্ষেত্রে ইউরোপ ও কোয়াডের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। বিশ্বব্যাপী টিকা কার্যক্রম জোরদারে দাতাগোষ্ঠীগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়েও তিনি আশ্বাস দেন।
বাইডেন জানান, বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলা এবং টিকা কার্যক্রমে সহায়তাকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এ বছরই বিশ্বের অন্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া গতকালের সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় বাইডেন আগামী বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে আরেকটি সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দেন।
এদিকে টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স বাংলাদেশের জন্য আরো ৮৯ লাখ ডোজ কভিড টিকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে ৭১ লাখ ডোজ টিকা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম গত মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফেসবুকে এক পোস্টে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, ‘কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে আমরা ৭১ লাখ ফাইজার (যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ) ও ১৮ লাখ মডার্না টিকার (কোভ্যাক্সের নিয়মিত বরাদ্দ) নতুন বরাদ্দ পেয়েছি। এই বছরের শেষ প্রান্তিকে ওই টিকাগুলো সরবরাহ করা হবে। আমরা ওই সময়ের মধ্যে আরো বরাদ্দ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। যুক্তরাষ্ট্র ও কোভ্যাক্সকে ধন্যবাদ।’
যুক্তরাষ্ট্র গত ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৫ লাখ ডোজ টিকা অনুদান হিসেবে পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার বৈশ্বিক টিকা অনুদানের বড় অংশই পাঠিয়েছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। এদিকে প্রায় ছয় মাস বিরতির পর আগামী মাস থেকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসার কথা রয়েছে। এ ছাড়া চুক্তির আওতায় নিয়মিত টিকা আসছে চীন থেকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে জানান, প্রতি মাসে যাতে এক কোটি ডোজ বা তার বেশি টিকা পাওয়া যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিনোফার্ম থেকে আগামী অক্টোবর মাস থেকে প্রতি মাসে দুই কোটি হিসাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ছয় কোটি টিকা পাওয়া যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে কভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা ও টিকার ওপর জোর দেবেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী কভিড টিকাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন