ফের করোনার টিকা রপ্তানি শুরুর পরিকলপনা করছে ভারত। তবে তাদের টিকার মূল গন্তব্য হবে আফ্রিকার দেশগুলো। আফ্রিকাকে অগ্রাধিকার দিয়েই তারা ফের করোনার টিকা রপ্তানি শুরু করতে চলেছে। দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশকেই টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদনেও গতি বেড়েছে।
এ কারণেই দেশটি আবার ভ্যাকসিন রপ্তানি শুরু করার এই চিন্তা করছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় গত এপ্রিল মাসে হঠাৎ করেই টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। সেসময় আগে নিজ নাগরিকদেরকে টিকা দেওয়ার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত সরকার।
হুট করে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো, যারা করোনার টিকার জন্য মূলত ভারতের ওপর নির্ভর করে ছিল। টিকা রপ্তানি বন্ধে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তে টিকাদান কার্যক্রমে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে এসব দেশ।
অন্যদিকে ভারত এ পর্যন্ত তার জনগোষ্ঠীর ৯৪ কোটি ৪০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ৬১ শতাংশকে অন্তত এক ডোজ করে টিকা দিয়েছে।
আগামী সপ্তাহে কোয়াড জোটের সম্মেলনে যোগ দিতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সরকারপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। তাদের আলোচনায় টিকার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানি ফের শুরুর ইঙ্গিত দিলো ভারত সরকার।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, রপ্তানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। আফ্রিকাকে টিকা ও করোনা মোকাবিলা কার্যক্রম উভয় দিকেই সাহায্য করতে চায় ভারত।
ভারতে টিকা রপ্তানির বিষয়টি দেখভাল করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তাদের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রধানের সাক্ষাৎ হয়েছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, বৈশ্বিক টিকা সরবরাহ কর্মসূচি কোভ্যাক্সের আওতায় টিকা দেওয়ার বিষয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত কথা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বৈশ্বিক সংস্থাটির কর্মকর্তা ব্রুস আইলওয়ার্ড বলেছেন, আমাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, চলতি বছরই টিকা সরবরাহ শুরু হবে। তবে বছর শেষের আগেই, অর্থাৎ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে টিকা সরবরাহ শুরুর বিষয়ে নিশ্চয়তা পাবো বলে আশা করছি আমরা।
রপ্তানি বন্ধের আগে ভারত বিক্রি, উপহার ও অনুদান মিলিয়ে মোট ৬ কোটি ৬০ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছে বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত ভ্যাকসিন সাপ্লাই ওয়েবসাইটের হিসাব বলছে, দেশটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে মোট এক কোটি তিন লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ লাখ উপহারের এবং বাকি ৭০ লাখ বাংলাদেশের কেনা।
তবে গত বছরের নভেম্বরে সই হওয়া চুক্তি অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমভাগে বাংলাদেশকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে মোট তিন কোটি টিকা দেওয়ার কথা ছিল ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের। এর জন্য তাদের আগাম ৬০০ কোটি টাকাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুই দফায় কেনা টিকার মাত্র ৭০ লাখ ডোজ দিয়েই পাঠানো বন্ধ করে দেয় সিরাম।
তবে গত ৬ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লি সফরকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আরও উন্নতি হওয়ার পর বাংলাদেশে টিকা পাঠানো হবে বলে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
এর দুদিন পরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, শিগগির বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি শুরু করবে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদক সিরাম ইনস্টিটিউট। গত আগস্টেও তিনি জানিয়েছিলেন, ভারতে করোনা সংকট কেটে গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবে বাংলাদেশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন