পুলিশ আই (এসে) কয় উডি (উঠে) যান। পুলিশ বাপজানরে বলি, উডি যামু কই (কোথায়), পেডেতো (পেটে) ভাত নাই, নিজে খামু কি? পরিবারকে খাওয়ামু কি? পিঠ দেয়ালে ঠেইক্কা গেছে আরতো পারি না।
বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে নিজের অসহায়ত্বের কথা এভাবেই বলছিলেন আশি ঊর্ধ্ব বৃদ্ধ আজাদ হোসেন।
ফেনী শহরের ট্রাংক রোড় এলাকায় কয়েক ডজন কলা নিয়ে বসেছেন তিনি। দিন শেষ যা বিক্রি হবে তার লাভের অংশ দিয়েই এ বৃদ্ধের পাঁচ সদস্যের সংসারের চাকা ঘুরবে।
শহরের কলেজ রোড় এলাকায় কথা হয় রিকশা চালক নুরুল আলমের (৬০) সঙ্গে। এ রিকশা চালক বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানসহ ৬ জনের সংসার আমার। একদিন রিকশা নিয়ে বের না হলে ঘরের সবাইকে উপোস থাকতে হয়। পেটের যন্ত্রণা বড় যন্ত্রণা। তাই পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবির ভয়কে উপেক্ষা করেই লকডাউনের মধ্যেও বের হতে হয়। ’
নুরুল আলম আরও বলেন, দুই ছেলে স্কুলে পড়ে তাদেরও বিভিন্ন খরচ আছে। তাই উপায় না পেয়েই ঘর থেকে বের হয়েছি। পেটে খিদার যন্ত্রণা না থাকলে ঘর থেকে বের হতাম না।
ফেনী সরকারি কলেজের সামনে লেবুর শরবত বিক্রেতা আবদুল মান্নান জানান, সারাদিন শরবত বিক্রি করেন দু থেকে আড়াইশ টাকার, যা লাভ হয় তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। মেয়েটা স্কুলে পড়ে তারও খরচ আছে।
মান্নান বলেন, লকডাউনের মধ্যে শরবত বিক্রি করছি বলে পুলিশ পেটায়, ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করে, র্যাব বিজিবিও পেটায় তবুও বসে থাকি। মার খাওয়ার ভয় করলে তো সংসার চলবে না, ছেলে-মেয়েগুলোর মুখে খাবার তুলে দিতে পারবো না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাই ঘর থেকে বের হতেই হয়। আজ ১৩ দিন লকডাউন। এভাবে আর কত?
মান্নানের সঙ্গে আলাপকালে যোগ দেন আবদুস সোবহান নামের আরেকজন। সোবহান জানান, তার কোনো ঘর-বাড়ি নেই। রাস্তাতেই থাকেন। লকডাউনের কারণে চরম কষ্টে আছেন তিনি। অন্য সময় খাবারের অভাব না থাকলেও লকডাউনে খাবার জুটছেনা। খেয়ে-না খেয়ে কোনো রকমে বাঁচতে হচ্ছে।
আফসার হোসেন নামে একজন সিএনজি চালক বলেন, আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। এখন তো রাস্তায় লোকজনই নেই, আমাদের আয়ের উৎস নেই। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সিএনজিও চালাতে পারছি না। পুলিশ বাধা দেয়। তাই মূল সড়কে না উঠে পাড়া মহল্লা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।
ফেনী সরকারি কলেজের সামনে আমিন নামের আরেক রিকশা চালক বলেন, পুলিশ রাস্তায় দেখলে বাধা দেয়। রিকশার গদি ফেলে দেয়। তবু বের হই। গাড়ি না চালালে কিস্তিগুলো কিভাবে দেব? পরিবারকে কি খাওয়াবো? নিজে কি খাবো? তাই লকডাউনের মধ্যেও বের হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় পুলিশের ভয়ে যেতে পারিনা। যাত্রীও তেমন নেই। যা আছে কিছু ইনকাম করতে পারলেই পরিবার চলবে।
বুধবার (৪ আগস্ট) সরকার ঘোষিত বিধি-নিষেধের ১৩তম দিন চলছে। সকাল থেকে ফেনী শহরের বিভিন্ন সড়কে অন্যদিনের তুলনায় অধিক মানুষ লক্ষ্য করা গেছে। বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। দোকান খুলেছেন অনেক ব্যবসায়ীরা।
লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছেন চরম বিপাকে। যারা দিনে এনে দিনে খান তাদের অবস্থা বেশি খারাপ। দু-বেলা খাবারের যোগান দিতে বাধ্য হয়েই কাজে বেরিয়েছেন অনেকে। রিকশা ও সিএনজি চালকরা শহর এলাকায় গাড়ি চালিয়ে রোজগারের ব্যবস্থা করছেন। আবার ছোট ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে, ভ্যান-গাড়িতে সবজি, ফল বেচা-বিক্রি করছেন। এমন চিত্র পুরো শহর জুড়েই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, দোকান না খুললে পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হয়ে যাবে। দোকানের ভাড়া কিভাবে দেব? সে জন্য জীবনের ঝুঁকি থাকলেও দোকান খুলতে বাধ্য হয়েছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন