রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন ও সানাউল্ল্যাহ নূরীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে ২টি ল্যাপটপ এবং ২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। হাজেরা খাতুন জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম ও জয়যাত্রা টিভির জিএম (এ্যাডমিন) । তিনি দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হেলেনা জাহাঙ্গীরের আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন। এছাড়া সানাউল্ল্যা নুরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয় ভীতি প্রদর্শন করতেন। গাজীপুর গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশও জয়যাত্রা টিভিতে প্রদান করতেন।
তিনি বলেন, জয়যাত্রা টিভি ২০১৮ সাল থেকে হংকং এর একটি ডাউন লিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছে। যার ফ্রিকুয়েন্সি হংকং থেকে বরাদ্দ করা হয়। ফ্রিকুয়েন্সির জন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়। ফ্রিকুয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচারের কোন বৈধ অনুমোদন নেই।
তিনি আরও বলেন, দেশে সম্প্রচারের জন্য ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছে রিসিভার জয়যাত্রা টিভি বা তার প্রতিনিধির দ্বারা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রতিনিধিরা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সম্প্রচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে চাকরিচ্যুত করা হতো। এই টিভি বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জেলায় সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। টিভি চ্যানেলটি রাজধানী ও জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনপ্রিয় করার লক্ষে ব্যাপক উদ্দেশ্য প্রণোদিত পরিকল্পনা নেয়। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অধিকসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করা যায়।
মঈন বলেন, গুরুত্ব বিবেচনায় জেলা প্রতিনিধি ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা, উপজেলা প্রতিনিধি দশ থেকে বিশ হাজার টাকা এককালীন প্রদান করতে হয়। এছাড়া প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। টিভিটি বিশ্বের প্রায় ৩৪টি দেশে সম্প্রচারিত হয়। যেখানে দেশের গুরুত্ব বিবেচনায় এক থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধিরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। যারা প্রতি মাসে বিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন। নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ সংগ্রহ ও যাবতীয় হিসাবপত্র হাজেরা খাতুন এর ওপর ন্যাস্ত ছিলো। হেলেনা জাহাঙ্গীরের চাপে ও নির্দেশনায় কোনো কোনো প্রতিনিধি নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত হন। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তি প্রচার, প্রার্থিতা প্রচার, সাক্ষাতকার ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি অংশ গ্রেপ্তারকৃতদের মাধ্যমে হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রহণ করতেন।
তিনি বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টিভিকে তিনি নিজ প্রচার ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করতেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতেন। মলূ মিডিয়া জগতের বিপরীতে তিনি একটি সংগঠন তৈরীর পরিকল্পনা করেন। যেখানে ৫ হাজার সংবাদকর্মীর একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। তিনি দেশব্যাপী এই নেটওয়ার্ক ব্যক্তি হীন স্বার্থে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন।
তিনি আরও বলেন, জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনে ডোনার, জেনারেল মেম্বার, লাইফ টাইম মেম্বার ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এই সংগঠনের প্রায় ২০০ জন সদস্য রয়েছে। যাদের কাছ থেকে সদস্য পদ বাবদ বিশ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়। যা সামান্যই মানবিক কাজে ব্যবহার করে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হতো। অবশিষ্ট অর্থ তার সন্তানদের নামে সঞ্চয় করা হতো।
জয়যাত্রা টিভির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার আল মঈন বলেন, মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর সঙ্গে জয়যাত্রা টিভির সঙ্গে সম্পর্ক প্রতারণার অংশ কিনা তা খতিয়ে দেখছে র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা। হেলেনা জাহাঙ্গীর বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তোলা ছবি ব্যবহার করতেন। এসব ছবি তিনি নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এবং বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণার জন্য ব্যবহার করতেন। তা এ ধরনের প্রতারণার অংশ কিনা তা গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন সংস্থা খতিয়ে দেখছে। সম্পাদনা: মিনহাজুল আবেদীন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন