আপনি জীবিত আছেন। দেহে প্রাণও আছে। হাঁটতে ও চলতেও পারেন। সুস্থ স্বাভাবিক। প্রয়োজনের তাগিদে যদি কখনো কোনো সরকারি অফিসের দ্বারস্থ হয়ে অর্ধশতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে জানতে পারেন আপনি মৃত তখন আপনার কেমন লাগবে। আপনার অনুভূতি কেমন হবে?
করোনাভাইরাসের টিকা নিতে গিয়ে এমন এক পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সালমা আক্তার (৩৫) নামে এক প্রধান শিক্ষিকা। গত কয়েক মাস আগে করোনার টিকা নিতে গিয়ে তিনি এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হন।
শুধু সালমা নন। গত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে মো. নজরুল ইসলাম নামে সাবেক এক যুবলীগ নেতা জানতে পারেন তিনি আর বেঁচে নেই। তাই তিনি আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন উপজেলা নির্বাচন অফিস।
সালমা আর নজরুল ছাড়াও বেঁচে থেকে সরকারি হিসেবে মৃত হওয়ায় বিপাকে আছেন এমন ৮ থেকে ১০ জন। জীবিত থাকার পরও এমন বিস্ময়কর ঘটনায় হতবাক ভুক্তভোগীরা। প্রতিনিয়ত নিজেকে জীবিত প্রমাণে ঘুরছেন নির্বাচন অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে।
জীবিত থাকার পরও মৃত হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। বঞ্চিত হচ্ছেন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে। অনেকে সরকারি বেতন বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তবে অনেক মৃত ভোটারের সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছেন না উপজেলা নির্বাচন অফিসের কর্তারা। উপরস্থ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে তারা এসব ভোটারদের সম্পর্কে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের দিকে ভোটার তথ্য হালনাগাদের সময় ভুল তথ্য দিয়ে ওই সব ব্যক্তিদের মৃত দেখান তথ্য সংগ্রহকারীরা। আর তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাতে সই-স্বাক্ষর করে দন ভোটার তথ্য হালনাগাদে দায়িত্বে থাকা শনাক্তকারী ও সুপারভাইজাররা।
ভোটার তালিকায় মৃত হওয়া মো. নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, ভোটার তথ্য হালনাগাদের সময় ভুল তথ্য দিয়ে তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। ভোটার তালিকায় তিনি মৃত হওয়ায় করোনার টিকা পর্যন্ত নিতে পারছেন না। ঋণ নিতে পারছেন না। বঞ্চিত হচ্ছেন রাষ্ট্রীয় সেবা থেকে।
তিনি আরও জানান, তার মতো এমন অনেকে জীবিত থেকেও মৃত।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান যুগান্তরকে জানান, উপরস্থ কর্মকর্তাদের নিষেধ থাকায় তথ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তি আবেদন করেছেন ভোটার তালিকায় মৃত থেকে জীবিত হওয়ার জন্য। আবেদনগুলো সংশোধনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন