টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে ধর্ষণে সহযোগীর সাথে বিয়ে দেয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের চেচুয়াজানী গ্রামে ধর্ষণের বিচারে সোমবার সালিশ বৈঠকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে।
এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে সালিশ বৈঠকে জরিমানার মাধ্যমে প্রকৃত ধর্ষককে আড়াল করে তার সহযোগী যুবকের সাথে জোর করে ওই তরুণীকে বিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার ইরতা গ্রামের তালাকপ্রাপ্ত তরুণীর সাথে চেচুয়াজানী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে নুর আলমের মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্পর্কের টানে গত শুক্রবার সারা দিন বিভিন্ন জায়গায় অটোরিকশায় করে তরুণীকে নিয়ে প্রেমিক ও তার সহযোগীরা ঘোরাফেরা করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় চেচুয়াজানী গ্রামের রহিম মিয়ার ছেলে রাব্বেলের সেলো মেশিন ঘরে প্রেমিক নুর আলম মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন বলে জানা গেছে। এতে সহযোগিতা করেন তার বন্ধুরা। পরে রাত গভীর হলে ওই মেয়েটিকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যান নুর আলম।
পর দিন সকালে মেয়েটি বিয়ের দাবিতে প্রেমিক নুর আলমের বাড়িতে অবস্থান করেন। তিন দিন ওই বাড়িতে অবস্থান করার পর মেয়ের বাবা নাগরপুর থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ‘ধর্ষণের বিচারে’ এলাকায় সালিশ বৈঠকে জরিমানা না দিতে পারায় ধর্ষণে সহযোগিতার দায়ে রমেজের সাথে বিয়ে দেয়া হয়েছে ধর্ষণের শিকার ও তালাকপ্রাপ্তা তরুণীকে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রেমিক নুর আলমের সাথে মেয়েটির আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
সোমবার শুক্কুন মিয়ার বাড়িতে মাতব্বর হেলালের নেতৃত্বে সালিশ বৈঠকে একই গ্রামের হাকিম মিয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য বাদশাসহ মাতব্বররা মেয়ের বাবাকে চাপ দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।
জানা গেছে, ওই বৈঠকে চেচুয়াজনী গ্রামের মো: নজরুল ইসলামের ছেলে নুর আলমকে এক লাখ টাকা ও ধর্ষণে সহযোগিতা করায় অপর চার বন্ধু বাদল মিয়ার ছেলে মনির, রহিম মিয়ার ছেলে রাব্বেল, সেলিম মিয়ার ছেলে নাছির ও বাবু মিয়ার ছেলে রমেজকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এদের মধ্যে বাবুল মিয়ার ছেলে রমেজ অতিদরিদ্র ও নিরীহ হওয়ায় জরিমানার টাকা দিতে অপারকতা প্রকাশ করে। এতেই কাল হয় রমেজের।
সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্তে ওই মেয়েকে রমেজের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। এ দিকে জরিমানার সম্পূর্ণ টাকা ওই মেয়েকে দেয়ার কথা থাকলেও মাত্র এক লাখ টাকা রমেজের বড় ভাই মিজানের হাতে তুলে দেন বৈঠকের মাতব্বররা।
এ বিষয়ে রমেজের বড় ভাই বলেন, আমার ভাই ধর্ষণের সাথে জড়িত ছিল না। শুধু নুর আলমের সাথে থাকার কারণে ও আমাদের দারিদ্র্যতার সুযোগে মেয়েটিকে আমার ছোট ভাইয়ের সাথে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, জরিমানার সব টাকা দেয়ার কথা থাকলেও আমার হাতে এক লাখ টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়। বাকি টাকার জন্য যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন তালবাহানা দেখায় মাতব্বররা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেলাল মাস্টার বলেন, ওই সালিশ বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম না। এলাকার মানুষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।
ধর্ষণের অভিযোগ তদন্তকারী থানার এসআই মো: আরফান খান জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য এলাকবাসী সময় নিয়ে রমেজের সাথে ওই মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন