আবু রায়হান এবং আব্দুল মান্নান খান (ছদ্মনাম) দুজনই করোনায় আক্রান্ত। জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে আবু রায়হান মুগদা জেনারেল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চেষ্টা করেও ভর্তি হতে পারেননি। অপরদিকে আব্দুল মান্নান তার বিশেষ যোগাযোগের জোরে ভর্তি হন একটি হাসপাতালে। কিন্তু তিন দিন পরই ছাড়া পান। তার অবস্থা ভালোই ছিল। হাসপাতালে ভর্তি না হলেও চলতো। অথচ তার কারণে যার প্রকৃতপক্ষে দরকার ছিল, এমন একজন বেড পেলেন না। এ তথ্য জানালেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলকি হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে শনাক্ত হয়েছেন সাত হাজার ৬২৬ জন। এ নিয়ে টানা চার দিন ধরে দেশে করোনায় শনাক্ত ৭ হাজারের ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীরা সাধারণ বেডও পাচ্ছেন না, আইসিইউ তো সোনার হরিণ।
চিকিৎসকরা বলছেন, কেবল রোগী মারা গেলেই বেড খালি হচ্ছে। সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে সিরিয়াস রোগীরা হাসপাতালেও আসতে পারবেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তির দরকার নেই। সেক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বুঝে ভর্তির নীতিমালা করা দরকার। এতে বেডের ওপর চাপ। মৃদু উপসর্গজনিত রোগীদের একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাসায় আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে।
রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত ২২ মার্চ রাজধানীর মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটকেও করোনা ডেডিকেটেড করা হয় সেদিন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নতুন করে স্থাপন করা হয় আইসিইউ বেড।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজে বলেছেন, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে পুরো ঢাকাকে হাসপাতাল বানালেও জায়গা দেওয়া মুশকিল হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৬ এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার অধিদফতরের তালিকাভুক্ত ১০টি সরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাধারণ বেড রয়েছে দুই হাজার ৫৫৫টি। তাতে রোগী ভর্তি দুই হাজার ৪১৫ জন। এরমধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সাধারণ বেড ২৭৫টি। ভর্তি আছেন ৪২৫ জন। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ২৫০ বেডে ভর্তি আছেন ৩০১ জন। সব জায়গাতেই বেডের চেয়ে বেশি ভর্তি করা হয়েছে।
অধিদফতরের তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ বেড ৮১৩টি তাতে রোগী ভর্তি আছেন ৬৮১ জন। ফাঁকা রয়েছে ১৩২টি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেবল রোগী সুস্থ হলে বা মারা গেলেই তারা নতুন রোগীকে বেডে নিতে পারছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটি দেশের ৮ বিভাগের ১০ হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের নিয়ে এক গবেষণা করে। গবেষণা অসমাপ্ত হলেও তাতে দেখা যায় ২১ থেকে ২৪ দশমিক সাত শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জ্বর কিংবা কাশি নিয়ে। তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শুধু জ্বর আর কাশি আছে, কিন্তু শ্বাসকষ্ট নেই, এমন রোগীরা এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ডিসচার্জ হয়ে যাচ্ছেন। তাদের ভর্তি না করালেও হয়। এতে গুরুতর রোগীরা বাঁচার সুযোগ পাবেন।’
ঢাকায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি করার শর্তগুলো ভালোভাবে দেখতে হবে জানিয়ে আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সেনাবাহিনীর অধীনে ফিল্ড হাসপাতাল বানানো যায়। গুরুতর নয় এসব রোগীদের সেখানে ভর্তি করানো যায়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এমন অনেকেই হাসপাতালে আসেন যারা নেগেটিভ হবার পরও থেকে যান। তাদের কারণেও অনেকে বেড পাচ্ছে না।
রোগীর প্রভাব বা সামাজিক ক্ষমতা বিবেচনায় না নিয়ে রোগের তীব্রতা অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তির জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। এটা নিশ্চিত হলে সবার জন্যই মঙ্গল। বললেন ডা. লেলিন চৌধুরী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন