স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বাংলাদেশে বড় সংকট গণতন্ত্র। এ ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা নেই। কার্যকর নির্বাচন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা যায়নি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে নাগরিকরা উদ্বিগ্ন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট ও মিত্তাল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বুধবার শুরু হওয়া দু’দিনব্যাপী অনলাইন সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সম্মেলনের বিষয় ছিল ৫০ বছরে বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, বিশেষ ফেলো রওনক জাহান, অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ক্যাশ, চীনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লিংকন সেন, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারি বাস, ওয়াটার এইডের আঞ্চলিক প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।
তবে অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য আশার দিকও রয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আমরা আজ উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। এ ছাড়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণতন্ত্রের আশা জাগায়।
ড. রেহমান সোবহান বলেন, গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় বাংলাদেশ শুরু থেকে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার মধ্যে আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন, যেন এলিট শ্রেণি দরিদ্রদের শোষণ করতে না পারে।
কিন্তু যেদিন জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো সেদিন থেকেই সমাজতন্ত্রের অবসান হয়েছে। বর্তমানে আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যে মুখোমুখি অবস্থানে পৌঁছেছে, তা সংসদীয় ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ। তবে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দেশে চারটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে মনে করেন রেহমান সোবহান।
তিনি বলেন, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালের নির্বাচন ও ২০০৮ সালের সেনাসমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচন ছিল সর্বশেষ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এরপর যেসব নির্বাচন হয়েছিল, সেগুলোকে বলা যায়, নন-ইলেকশন। কারণ, সেসব অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল না।
রওনক জাহান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবাদমাধ্যমকে শৃঙ্খলিত করার ঘটনা উদ্বেগজনক। এমন আইন প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। সবার আগে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজকে স্বাধীনতা দিতে হবে।
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, শিক্ষা খাতে সার্বিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি একটি সমস্যা। প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা মূলত সরকারি হওয়ায় নজরদারি রয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থার নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব থাকে, যা শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একটা সময় বাংলাদেশকে দুর্যোগের শিকার ভুক্তভোগী মনে করা হতো। সে অবস্থান থেকে দেশ এখন দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছে। তিনি মনে করেন, বিনিয়োগ ও সুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইএমএফের পক্ষে ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে প্রবাসী আয়, তৈরি পোশাকশিল্প ও কৃষি খাত যে ভূমিকা রেখেছে, ৫০ বছর পর আমরা নতুন কী করতে পেরেছি-প্রশ্ন রাখেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন