রাজধানীর ধানমন্ডিতে বহুতল ভবনের নিচে পড়ে মারা যাওয়া বিদেশ পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এখনো কাটেনি ধুম্রজাল। সুরতহালকারী পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলছেন, প্রাথমিকভাবে মৃত তাজরিন মোস্তফা মৌমিতার (১৯) শরীরে ধস্তাধস্তি চিহ্ন বা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে মারা যাওয়ার কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তথ্য মেলেনি। তবে, অভিযোগের তীর থাকায় ওই ভবন মালিকের ছেলে ফাইজারকে আটকের চেষ্টা চলছে।
ভিকটিমের পরিবার এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তে গতি মিলবে। পাশাপাশি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র বলেন, মৃত মৌমিতার পরিবার শনিবার রাত ৭টা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারা একটু দেরিতে অভিযোগ দায়ের করবে বলে শুক্রবার রাতেই আমাদের জানিয়েছে। অভিযোগ দায়ের করার পরই আমরা মামলা নেব।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আরো বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভবন মালিকের ছেলে ফাইজারের বন্ধু আদনানকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ফাইজারকেও আটকের চেষ্টা চলছে। সব মিলিয়ে আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। অনুসন্ধান শেষে এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে এটি আত্মহত্যা না হত্যাকান্ড সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
এদিকে, শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে ওই ছাত্রীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, মৃতদেহ থেকে ব্লাড, ভিসেরা ও হাইভেজনাল সোয়াব সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এগুলো পরীার জন্য হিস্ট্রোপ্যাথলোজিতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে বলা যাবে ধর্ষনের চেষ্টা করা হয়েছিলো কিনা। তার শরীরে ধস্তাধস্তির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তার শরীরে যেই আঘাত গুলো রয়েছে তা ভবন থেকে পড়ার কারণেই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
মৃত ছাত্রীর বাবা কামাল মোস্তফা শামীম জানান, তাদের বাড়ি টাঙাইল ভুয়াপুর ঘাটানদি গ্রামে। তিন মেয়ের মধ্যে মৌমিতা মেঝো। তারা সপরিবারে মালয়েশিয়াতে থাকতেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের পরে তারা ঢাকায় ফিরে আসে। এরপর থেকে কলাবাগান ৮ নম্বর রোডের, ২ নম্বরে একটি ৭ তলা বাসার ৪র্থ তলাতে থাকেন। তাজরিয়ান মোস্তফা মৌমিতা (১৯) মালয়েশিয়ার এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির বিএসসি ইঞ্জিনিয়িরিং ২য় বর্ষে পড়তো। গত বছরের ১৮ জুলাই সেখান থেকে ঢাকায় আসে সে। ঢাকায় আসার পর থেকে অনলাইনে কাশ করতো।
তিনি জানান, কলাবাগানের ওই বাড়ির মালিকের ছেলে ফাইজার তাকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো। ফাইজারের বন্ধু আদনানও তার সঙ্গে মিলে মৌমিতাকে উত্ত্যক্ত করতো। বাসার বাড়িওয়ালার একটিই ছেলে। সে বাইরে থেকে বিভিন্ন ছেলেদের বাসায় নিয়ে আসতো। গত সপ্তাহে মৌমিতার মা ফাইজারের মাকে বিষয়টি জানিয়েছিলো। তবে তিনি উল্টা প্রতিক্রিয়া করেছে মৌমিতার মায়ের উপর। তিনি বলেন ‘আমার ছেলে যা মনে চায় তাই করবে, আপনার মেয়েকে বের হতে না দিলেইতো হয়, আমার ছেলেকে কেনো থ্রেট দিতে আসছেন’।
কামাল মোস্তফা বলেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মৌমিতা ছাদে উঠে। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে শুনি সে পড়ে গেছে ছাদ থেকে। সেখানে আমার বাসার কাজের ছেলেও দেখেছে অনেকে ক্রিকেট খেলছে, হৈচৈ করছে। আমি মৌমিতাকে মেসেজ দিয়েছিলাম সে বললো আসতেছি। এরপর আমি গ্রীন রোডে আমার অফিসে চলে যাই তখন আমার ছোট মেয়ে ফোনে বলে, আব্বু তাড়াতাড়ি গ্রীন লাইফ হাসপাতালে আসো।
মৌমিতার ফুপু শাহনেওয়াজ খানম বলেন, ঘটনার সময় ছাদে ফায়জার ছিলে। বিকালে ছাদের দরজা লাগিয়ে দিয়েছিল। আমাদের ধারণা মৌমিতাকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই সে মৌমিতাকে উত্ত্যক্ত করছিল।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন