রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী ‘ধর্ষণের পর হত্যা’ ঘটনায় ডিএনএ প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ। ঘটনার ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বললেও দেড় মাস পার হলেও সেই প্রতিবেদন দিতে পারেনি সিআইডি। প্রতিবেদন জমা দেওয়া নিয়ে সময় ক্ষেপণের কারণে মামলার প্রতি আস্থা হারিয়েছে বলে দাবি করছেন ভিকটিম পরিবার।
ভিকটিম কিশোরীর বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মামলার শুরুতে দ্রুত সব কিছু হচ্ছিল। সবার সাহায্যও পাচ্ছিলাম। এখন ধীরে ধীরে মামলার তদন্তের গতি কমে গেছে। মানুষ ঘটনাটাও ভুলে যাচ্ছে। সব জায়গায় ফাইলের ওপর ফাইল জমা পড়ছে। শেষ পর্যন্ত আমরা মেয়ের হত্যার বিচার পাবো কিনা সেটা নিয়ে এখন সন্দেহ হয়।
তিনি আরও বলেন, দিন তো আর কম হলো না কিন্তু মামলার কোনও আগ্রগতি নেই। আমরা এই মামলার তদন্ত নিয়ে অনেকটাই হতাশ।
পুলিশ বলছে, মরদেহের পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে না পেলে। তদন্তের কাজ শেষ করা সম্ভব না। এই প্রতিবেদনগুলো ছাড়া মামলার অন্যান্য অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ প্রতিবেদন এখনও না পাওয়ায় প্রতিবেদন তৈরি করতে পারিনি। সেই প্রতিবেদন হাতে পেলেই দ্রুত গতিতে তদন্ত শেষ করে আদালতে রিপোর্ট জমা দিব।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা বলছেন, মৃতের বয়স নির্ধারণসহ অন্যান্য প্রতিবেদন প্রস্তুত আছে। ভিসেরা প্রতিবেদন হাতে এলে তাৎক্ষণিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টদের কাছে দেওয়া হবে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভিসেরা প্রতিবেদন না দেওয়ায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এখনও ভিসেরা ও ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পাইনি। এই দুই রিপোর্টই সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কাছে রয়েছে। তারা রিপোর্ট আমাদের হাতে দিলেই আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারব।
পুলিশ ও ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের মতে মামলার সব কিছু নির্ভর করছে সিআইডির কাছে থাকা ভিসেরা ও ডিএনএ প্রতিবেদনের ওপর। সেখানকার রিপোর্ট হাতে পেলেই মামলার তদন্তে গতি ফিরবে।
এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) রুমানা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কলাবাগানের মামলার যে কাজ আমাদের কাছে আছে। তার সব কিছু আমরা সম্পন্ন করেছি। ডিএনএ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। রিপোর্টটা আমাদের চিফ স্যারকে একবার দেখিয়ে নেব। তারপর জমা দিয়ে দেব। আশা করি সেটা এই সপ্তাহের মধ্যেই মামলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে পারব।
ভিকটিমের ডিএনএ প্রতিবেদনে ঘটনার সময় কজনের উপস্থিতি ছিল তা জানতে চাইলে সিআইডির এই ফরেনসিক বিভাগের এসএসপি বলেন, বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ যা আমরা এই মুহূর্তে বলতে চাচ্ছি না। চিফ স্যারের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব বিষয়টি আমাদের পক্ষে থেকে মিডিয়াকে জানবো কি না।
গত ৭ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ফারদিন ইফতেখার দিহান সেদিন দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে ওই স্কুলছাত্রীকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর কলাবাগানের বাসায় নিয়ে যায় তাকে। সেখানে ফাঁকা বাসায় মেয়েটিকে ধর্ষণ করে দিহান। ধর্ষণের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মেয়েটি অচেতন পড়ে।
তখন বিবাদী ধর্ষণের বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য মেয়েটিকে নিয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যায়। সেখানে মেয়েটির মৃত্যু হয়। সংবাদ পেয়ে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত হাসপাতালে যায়।
খবর পেয়ে তরুণটির তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরও আটক করে। পরে চার জনকে কলাবাগান থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ পরে স্কুলছাত্রীর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন