একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত পলাতক আসামি ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর এবং আদালতের রায়ের তিন বছর পর মঙ্গলবার ইকবালকে ঢাকার দিয়াবাড়ি থেকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে। হরকাতুল জিহাদের সদস্য সেলিম এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল বলেও দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) আব্দুল্লাহ-আল-মামুন চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন।
২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন হুরকাতুল জিহাদ সদস্য ইকবাল হোসেন। ২১শে আগস্ট মঞ্চ লক্ষ্য করে নিজে গ্রেনেড ছুড়েছিল ইকবাল। হামলার পর আত্মগোপনে যান ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত এ জঙ্গি আসামী। আত্মগোপনে থাকাকালীন ইকবাল নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিকের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন।
তবে র্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার উপর্যুপরী অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে ২০০৮ সালে দেশ ত্যাগ করেন তিনি। প্রথমে সেলিম এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করেন। মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর ২০২০ সালের শেষের দিকে অন্যদের মতো তাকেও দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ গত রাতে গ্রেফতার হন তিনি।
ছাত্রদল থেকে হুজিতে যোগ দেয় ইকবাল
গ্রেফতার ইকবালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, জঙ্গি ইকবাল এইচএসসি পাস। স্কুল ও কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্র দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে সে জানায়। জঙ্গি ইকবাল ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিল। সে ১৯৯৫ হতে ১৯৯৮ পর্যন্ত মালয়শিয়ায় প্রবাসী কর্মজীবী হিসেবে অবস্থান করে। দেশে ফিরে এসে জঙ্গি ইকবাল আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। এসময় সে, সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। ২০০১ সালে তার চিন্তা-চেতনা ও মনস্তাত্তিক পরিবর্তন আসে। সে ঝিনাইদহের স্থানীয় এক জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে সে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি) তে যোগদান করে।
মুফতি হান্নানের সাথে সরাসরি যোগা যোগ ছিল ইকবালের ২০০৩ সালে মুফতি হান্নান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্যে চলে আসে। জঙ্গি প্রশিক্ষণও নেয়। ২০০8 সালে আগস্ট মাসে মুফতি হান্নানের নির্দেশে ঢাকায় চলে আসে ইকবাল। আশ্রয় নেয় গোপন আস্তানায়। সেখানে হুজিবি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য সমমানদের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়। সে মুফতি হান্নানের সাথে বিভিন্ন স্থানে দলীয় গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করতো।
ঘটনা পরবর্তী র্যাব জঙ্গি ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। ২০০৮ সালে জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহে তার নিজ বাড়ীতে এবং পরবর্তীতে গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। এ সময় আত্মগোপনে থাকাকালীন সে নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিক ইত্যাদি ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল বলে জানায়।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব প্রধান বলেন, ২০০৮ সালে ম্যানুয়াল পাসপোর্ট ছিল। সেসময় সে নিজের নাম পরিবর্তন করে দেশ ত্যাগ করে। দেশে ফেরার সময় সে অন্য অবৈধ অভিবাসীর ন্যায় ফেরত আসেন।
এই গ্রেনেড হামলার মামলায় দণ্ডিত ৩৩ আসামি কারাগারে থাকলেও পলাতক ছিলেন ১৬ জন। ইকবাল গ্রেফতার হওয়ায় এখন পলাতক রইলেন ১৫ জন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন