সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত সপ্তায় সিঙ্গাপুরস্থ যে প্রতিষ্ঠান থেকে গম ক্রয়ের প্রস্তাব অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার কারণে বাতিল করেছিল সেই একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে গম ক্রয়ের চুক্তি করতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা এমন অনৈতিক কাজ করতে রাজি নন। কিন্তু তাদের উপর মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব চ‚ড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য।
সিঙ্গাপুরের যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে চাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয় এটির নাম এগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড। এটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে অনুসৃত সরকারের ক্রয় নীতিমালা পিপিআর, ২০০৮ অনুযায়ী সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অন্য সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে চুক্তি করতে পারে। দেশি বা বিদেশি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে চুক্তি করতে পারে না।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চুক্তি আইন লঙ্ঘনের বিষয়টা ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ ক্রয় কমিটি কর্তৃক বিদেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডিপিএম চুক্তিতে গম ক্রয়ের ব্যাপারে ‘ওয়েভার’ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে ক্রয় কমিটি নাকি আগাম আভাস দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে।
অথচ খাদ্য বিভাগের পাঠানো এগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনালেরই একটি দরপ্রস্তাব গত সপ্তায় ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নাকচ করে দিয়েছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার কারণে। ওই দরপ্রস্তাবটি ছিল ওপেন টেন্ডার মেথডের এবং তাতেও ৫০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব করা হয়েছিল। টেন্ডারে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়ার কারণে দরপ্রস্তাবটি বাতিল করে দেয় ক্রয় কমিটি। আবার একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডিপিএম চুক্তিতে ৫০ হাজার টন গম ক্রয়েরই তোড়জোড় করা হচ্ছে মাত্র এক সপ্তার ব্যবধানে কোন যুক্তিতে, এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারছে না খাদ্য বিভাগ।
এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি যদি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এগ্রোকরপ-এর সঙ্গে গম ক্রয়ের চুক্তির জন্য পিপিআর, ২০০৮ লঙ্ঘনের ‘ওয়েভার’ই দেয়, তাহলে সেই একই প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারের দরপ্রস্তাব ‘ওয়েভার’এর মাধ্যমে কমিটি গ্রহণ করলো না কেন? এ প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দিতে পারছেন না।
এছাড়া আরেকটি প্রশ্নের উত্তরও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দিতে পারছেন না তাহলো, কোটেশনের টেন্ডারে সর্বনি¤œ তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব না দিলে আইনানুযায়ী ক্রয় কমিটি সেটি বাতিল করে দেবে- এটা জানা কথাই। তারপরও কেন এই দরপ্রস্তাব ক্রয় কমিটিতে পাঠানো হলো?
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সংকট ঘনীভ‚ত করাটাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য। এর মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডিপিএম চুক্তির ‘ওয়েভার’ পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধির অজুহাতে নিজেদের ইচ্ছেমতো লুটপাট করা যাবে। অবশ্য, খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ের এই ‘ফাঁদে পা’ দিতে চাচ্ছেন না। কারণ তারা জানেন, পিপিআর এর বাইরে চুক্তি করে এখন ‘ওয়েভার’ পাওয়া গেলেও ভবিষ্যতে যে কোনো সময় ফেঁসে যেতে পারেন। বিশেষ করে, একই প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারের দরপ্রস্তাব গ্রহণ না করে একই বিষয়ে ডিপিএম ক্রয়ের চুক্তি করার ঘটনা কোনোভাবে যুক্তি দিয়ে মানিয়ে নেয়া যাবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন