ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হন তরুণী। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের সহায়তায় সেবার ধর্ষক গ্রেফতার হয়। পরে ধর্ষক জামিনে বের হয়ে ফের হুমকি-ধমকি দেয় ভিকটিমকে। এ কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণী। তার এ বিপদে এগিয়ে আসেনি প্রতিবেশিরা। কেউ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। ফের ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ তাকে হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে। ততক্ষণে নষ্ট হয়ে যায় তার গর্ভের সন্তান।
PauseUnmute
Fullscreen
VDO.AI
বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন ওই তরুণী। পৃথিবীতে এই তরুণীর আপন বলতে কেউ নেই। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় বিশেষ দয়ায় আশ্রয় পেয়েছিলেন তিনি। সুস্থ হলেও এরপর কোথায় ফিরবেন তাও জানা নেই তার।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে জাতীয় জরুরি সেবার পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা ও গুরুতর অসুস্থ এক তরুণী (১৯) কলারের ফোন পেয়ে তাকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯।’
তিনি জানান, রবিবার (২৪ জানুয়ারি) বিকাল পৌনে ৫টায় বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ নম্বরে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এক অসুস্থ তরুণী ফোন করেন। ফোনে তরুণী জানান যে, তিনি অন্তঃসত্ত্বা এবং গুরুতর অসুস্থ। তার প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। কিন্তু তাকে বরিশালে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ নেই। তার মা-বাবা বেঁচে নেই।
জরুরি সেবা নম্বরে তরুণী আরও জানান,তিনি এক দূর সম্পর্কের খালার বাসায় থাকতেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে তিনি ধর্ষণের শিকার হন,ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। সে সময় তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে খবর পেয়ে ভাণ্ডারিয়া থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পুলিশ তখন ধর্ষণকারীকেও আটক করেছিল। তরুণী জানান,ভাণ্ডারিয়া থানায় তিনি এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু আসামি জেল খেটে কিছুদিন আগে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। ওই অপরাধীর ভয়ে দূর সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজন কেউই তরুণীকে সাহায্য করতে রাজি হচ্ছে না।
পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার সাত্তার বলেন, ‘এসব বলতে বলতে তরুণী কান্নায় ভেঙে পড়েন। ৯৯৯ নম্বরে কথা বলে তার জীবন বাঁচানোর জন্য এবং তাকে বরিশাল মেডিক্যালে পাঠানোর ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান।’
৯৯৯ নম্বর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা সবাই আত্মীয়-পরিজনহীন নিঃসঙ্গ তরুণীকে বরিশালে নিয়ে যেতে অনীহা প্রকাশ করে। পরে মেয়েটির কাছ থেকে তার এক আত্মীয়ের ফোন নম্বর নেওয়া হয়। ওই আত্মীয়কে ফোন করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে রাজি করানো হয়। একইসঙ্গে এক বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স প্রোভাইডারকে রাজি করানো হয়— তিনি যেন মেয়েটিকে বরিশালে যান।
অবশেষে রবিবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তরুণীকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন করে তরুণীর খোঁজখবর নেওয়া হয়। এ সময় তিনি জানান, তার শরীর এখনও বেশ খারাপ। তার গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। তবে ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত।
অসহায় এই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন,এরপর তিনি কোথায় যাবেন, কীভাবে থাকবেন, তা তার জানা নেই। কারণ, স্বজন ও প্রতিবেশি তার পাশে কেউ নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন