মালিবাগে বৃদ্ধ গৃহকর্ত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা সেই ভয়ংকর গৃহকর্মী রেখাকে ঠাকুরগাঁও থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, তার স্বামী এরশাদের প্ররোচনায় নগদ টাকার জন্য এমন ভয়ংকর র হয়ে ওঠেন রেখা। মূলত টাকা পয়সা গহনা লুটে নেওয়ায় ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি ওয়ালিদ হোসেন।
ওয়ালিদ হোসেন বলেন, এই ঘটনার পিছনে যে মোটিভ সেটা স্পষ্টতই মালামাল বা গহনা চুরি করা। এই চুরি করার পিছনে আসামী রেখা আক্তারকে যতটুকু জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তাকে টাকা-পয়সার জন্য চাপ দিচ্ছিল। ইতিমধ্যে সে ধার করে তার স্বামীকে ৪০ হাজার টাকাও দিয়েছেন। আরও টাকা চাওয়ায় সে বাধ্য হয়ে এ কাজ করেছেন। অর্থাৎ তার স্বামী এরশাদ তাকে এই কাজ করার জন্য প্ররোচিত করেছে। সেই হিসেবে রেখার পাশাপাশি তার স্বামীও এ মামলার আসামি হবে। আমরা তাকেও রাজধানী থেকে গ্রেফতার করেছি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন রেখা আক্তার মূলত এক বছর ধরে এই বাসায় কাজ করেন। ধারণা করা হচ্ছে সে কোন চক্রের সদস্য না। তাহলে সে দীর্ঘদিন এ বাসায় কাজ করতে পারতো না। তারপরও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে তার চক্রের বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।
বৃদ্ধ মহিলাটিকে মারার বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ধারণা এই মহিলার সঙ্গে রেখার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক চাইলেই সে সব দিয়ে দিবে এমন তার বিশ্বাস হয়নি। আতঙ্ক সৃষ্টি করে, ভয় ভীতি সৃষ্টি করে, এই জিনিসগুলো নিয়ে নেওয়া এই উদ্দেশ্যেই সে মারধর করেছে।
এটাকি তাৎক্ষণিক ঘটনা না পূর্ব পরিকল্পিত সাংবাদিকের করা এমন এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই মুখপাত্র বলেন, পরিকল্পনার ব্যাপারটি আমরা আরও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারবো। তবে আমরা ধারণা করছি, এটা হঠাৎ করে হয়নি। সে দীর্ঘদিন যাবৎ এটা নিয়ে পরিকল্পনা করেছে।
ওয়ালিদ হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার (২০ জানুয়ারি) গভীর রাতে শাজাহানপুর থানা পুলিশের একটি দল রাণীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গি থানার সীমান্তবর্তী কাশিপুর এলাকায় তার মামার বাড়ি থেকে রেখাকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে শাজাহানপুর থানা পুলিশ জানায়, ঘটনার পর প্রথমে ডেমরায় আশ্রয় নেয় রেখা। পরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে যায় ঠাকুরগাঁওয়ে মামার বাসায়।
তবে চুরি করা টাকার মধ্যে ১ লাখের বেশি খরচ করে ফেলেন রেখা। উদ্ধার করা হয় ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন।
উল্লেখ্য, ওই বৃদ্ধাকে মালিবাগের সেই বাসায় রেখে তাদের ছেলে মেয়েরা অন্যত্র থাকেন। বৃদ্ধাকে দেখার জন্য গৃহকর্মী রেখাকে রেখেছেন। এদিকে ওই বৃদ্ধাকে নগ্ন করে চরম নির্যাতন চালায় সেই গৃহকর্মী।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল সোয়া দশটা। প্রায় তিন বছর ধরে কিডনিরোগসহ নানা সমস্যায় ভোগা বিলকিস বেগম শুয়ে ছিলেন বিছানায়। পরম যত্নে তার সেবা করছেন রেখা নামে গৃহকর্মী। কিন্তু এরপরের ঘটনায় শিউরে উঠবে যে কেউ।
জোর করে বিলকিস বেগমকে বাথরুমে ঢোকান রেখা। এরই মাঝে খুলে ফেলে তার শরীরের সব কাপড়। শীতের সকালে বৃদ্ধার গায়ে ইচ্ছেমতো ঢালা হয় ঠাণ্ডা পানি। কিন্তু ভেতরে গৃহকর্ত্রীকে আটকাতে না পেরে বেরিয়ে আসে রেখার আসল চেহারা।
লাঠি দিয়ে মারা শুরু করে রেখা। মার খেয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলেও ক্ষান্ত হননি। একের পর এক আঘাত হানে মাথায়। একপর্যায়ে হাতের কাছে যা পেয়েছে তা দিয়েই চালিয়েছে নির্যাতন। আলমারির চাবির জন্য বুকের উপর চেপে বসে। বটি হাতেও তেড়ে আসেন রেখা। এসব কিছুর মাঝে তার লক্ষ্য আলমারি। একসময় অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন বৃদ্ধা বিলকিস বেগম। গলা থেকে চেইন খুলে পরে নেয় আয়েশি ভঙ্গিতে পরখ করে নেন হাতের বালা।
আলমারির চাবি পেয়ে খুলতে না পেরে রক্তাক্ত, অসুস্থ বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে বাধ্য করেন আলমারি খুলে দিতে। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল সবই নিয়ে নেয় রেখা।
পুরোটা সময় বিবস্ত্র বৃদ্ধা, নিজের হাতেই রক্ত থামাতে মাথায় বাঁধেন কাপড়। সব হাতানোর পর কক্ষে তালা দেয় রেখা। তারপর খুলে আনে টিভি। নিয়ে আসে ব্যাগ। সবকিছু গুছিয়ে ফাকা বাসায় আহত বৃদ্ধাকে ফেলে বেরিয়ে যায় এই গৃহকর্মী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন