গ্যাস খাতের আর্থিক সংকট সামাল দিতে নতুন নিয়ম জারি করেছে জ্বালানি বিভাগ। এখন থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলো ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ (বিতরণ ব্যয়) রেখে গ্যাস বিলের অন্য সকল অর্থ পেট্রোবাংলাকে হস্তান্তর করবে।
আদেশে বলা হয়েছে, প্রতিমাসের ৭ তারিখের মধ্যে বিতরণ কোম্পানি আদায় হওয়া বিলের মধ্যে নিজেদের অংশ রেখে বাকি অর্থ পেট্রোবাংলাকে হস্তান্তর করবে। পেট্রোবাংলা পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে দেশি-বিদেশি দেনা পরিশোধ করবে।
জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত ১৭ জানুয়ারি এই আদেশ জারি করা হয়। জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে গ্যাস খাতে আর্থিক সংকট চলছিল। এজন্য আমরা একটি আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এতে করে বিতরণ কোম্পানিকে ব্যাংক একাউন্টে টাকা না রেখে তা পেট্রোবাংলার একাউন্টে দিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এরপর পেট্রোবাংলা সকল বিষয় সমন্বয় করবে।
বিতরণ কোম্পানিগুলো দেশি-বিদেশি গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ নিয়ে তা গ্রাহককে দিয়ে থাকে। এলএনজির দর পরিশোধে নির্দিষ্ট আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও দেশি-বিদেশি যেসব কোম্পানি দেশে গ্যাস উত্তোলন করে তাদের বিল বকেয়া থাকে। এতে করে আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই সমস্যা চলে আসলেও এখন থেকে এই সমস্যা আর থাকবে না।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন এবং আমদানি মূল্য যার মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (এসজিএফসিএল), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) ছাড়াও আইওসি এবং এবং এলএনজির মূল্য অন্তর্ভুক্ত। যা পেট্রোবাংলার মাধ্যমে সরকার নির্ধারণ করে। এটি পরিশোধের দায়িত্ব পেট্রোবাংলার। অন্যদিকে বিইআরসি ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করে। এরমধ্যে ট্রান্সমিশন চার্জ, ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি উন্নয়ন তহবিল এবং পেট্রোবাংলার চার্জ রয়েছে। এইখাতের সব টাকাই পেট্রোবাংলার হিসেবে জমা হবে। এখানে পেট্রোবাংলা একটি বাস্কেট হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে সবক্ষেত্রে এই আদেশ কার্যকর করলেও সংকটের কথা বলছেন কেউ কেউ। গ্যাস শুধু মাত্র বেসরকারি ব্যক্তিরাই ব্যবহার করে না। সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও গ্যাস ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে তারা কোনও কারণে বিল দিতে দেরি করলে সংকটে পড়তে হচ্ছে।
বাপেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেছেন, বাপেক্স এর শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের ৯৭ ভাগ গ্যাস পিডিবির বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়। এতে করে ওয়েল হেড মার্জিন অর্থাৎ গ্যাস উত্তোলন কোম্পানির পাওনা পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। এটি যদি পেট্রোবাংলার মাধ্যমে করা হয় তাহলে সংকট সমাধান করা সহজ হবে।
জ্বালানি বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে সমস্যা সমাধানে কোন সংকট সৃষ্টি হলে বিইআরসির সঙ্গে পেট্রোবাংলা সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন