ইতালির মিলান কনস্যুলেট অফিসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। মিলান কনস্যুলেট অফিসের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ, ক্লিনার জাকির হোসেন ও নিরাপত্তা প্রহরী হাবিবুর রহমানের আর্থিক দুর্নীতি ও অসদাচরণে ক্ষুব্ধ উওর ইতালির প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
জানা গেছে, দীর্ঘ দিন যাবৎ মিলান কনস্যুলেট অফিসে কর্মরত ক্লিনার জাকির হোসেন ও নিরাপত্তা প্রহরী হাবিবুর রহমানকে দিয়ে কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ পাসপোর্ট নবায়ন রশিদ কাটানো ও প্রদান, বিভিন্ন সনদ এর রশিদ কাটানো, সিরিয়াল ছাড়া নতুন পাসপোর্ট ও রিনিউ এবং প্রকৃত মালিক না আসলেও অন্যলোকের মাধ্যমে তা ৩০০ থেকে ৫০০ ইউরোর বিনিময়ে প্রদান সহ কনস্যুলেট অফিসে সেবা নিতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি প্রবাসীদের বিভিন্নভাবে হয়রানির সংবাদ প্রকাশ করায় ইতালি থেকে প্রকাশিত "দেশপ্রিয় নিউজ" অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল মজুমদার শিপন ও তার শিশুর পাসপোর্ট আটকিয়ে রেখেছেন কনসাল জেনারেল।
সূত্র মতে, ইতালির বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিচিত মিলানে অবস্থিত একমাত্র কনস্যুলেট অফিসে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ পেয়ে অনলাইন পোর্টালটি ‘দুর্নীতির আখড়া মিলান কনস্যুলেট অফিস’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় মিলান আওয়ামী লীগের জনৈক নেতার মাধ্যমে সাংবাদিককে সংবাদটি পেজ থেকে মুছে ফেলার জন্য অনুরোধ জানায়। সেই সাথে দুর্নীতির সংবাদটি মুছে ফেলার জন্য আর্থিক প্রস্তাব ও দেয়া হয় পত্রিকাটির সম্পাদককে। তবে সংবাদটি মুছে না ফেলায় প্রতিশোধ নিতে প্রবাসী সাংবাদিক ও তার সন্তানের পাসপোর্ট নবায়ন না করে তা দীর্ঘ দিন ধরে আটকিয়ে রেখেছেন বলে মিলান কনস্যুলেট অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাংবাদিক শিপন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী সোহেল মজুমদার শিপন বলেন, প্রবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তার অনলাইন দেশপ্রিয় নিউজে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের একাধিক সংবাদপত্রে খবরটি প্রকাশ হওয়ায় মিলান কনস্যুলেট অফিসে তার নিজের ও শিশু সন্তানের পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিলে পাসপোর্ট আটকে রাখেন। তিনি বলেন, মিলান কনস্যুলেট অফিসের বিরুদ্ধে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বিলম্ব, পাসপোর্ট নবায়নসহ অন্যান্য সেবা প্রদানে কনস্যুলেট অফিসে প্রবাসীদের কোনো না কোনোভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্হানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ‘সেবার নামে দুর্নীতির আখড়ায়’ পরিণত হয়েছে মিলান কনস্যুলেট অফিস। বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিয়মের অভিযোগ উঠায় চলতি বছরের ১৯ শে অক্টোবর সংস্হাপন মন্ত্রণালয়ের পরিচালক শেলী সালেহীন সাক্ষরিত একটি চিঠিতে মিলান কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদকে হংকংয়ে বদলির আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু সেই আদেশকে তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়তে তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ।
সূত্র মতে, যাদের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন সেই সব কর্মচারীদের অফিসে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সহ পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করছেন। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি অভিযোগ করে বলেন, কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ , ক্লিনার জাকির হোসেন ও নিরাপত্তা প্রহরী হাবিবুর রহমানের দাপটের শক্তিটা কোথায়। ভুক্তভোগী বহু প্রবাসী বাংলাদেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে তাদের দূর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আদায়ের কথা লিখে পরিত্রানের পথ খুঁজেছেন।
ভুক্তভোগী প্রবাসীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন।
ইতালিতে বসবাসরত চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী টিপু বলেন, আমার পাসপোর্ট রিনিউয়ের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য বহুবার ফোন দিয়েছি বিভিন্ন সময়ে, অফিসের কেউ ফোন ধরে না। কখোনো কখোনো জাকির হোসেনকে তার ব্যাক্তিগত মোবাইলে কল দিয়ে অ্যাপয়েনমেন্ট চাইলে সে নির্ধারিত নাম্বারে কল দিতে বলেন। তারও প্রায় ১ মাস পর অন্য শহরে কনস্যুলেট সেবা দিতে আসলে আমি সেখানে গিয়ে পাসপোর্ট রিনিউ করতে দেই। এটা তো হয়রানি।
এছাড়াও ভেনিসে বসবাসরত এক বাংলাদেশি কনস্যুলেট সার্ভিসে পাসপোর্ট রিনিউতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও অনিয়ম দূর্নীতির কথা প্রমাণ সহ সাংবাদিকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করলে সেই ব্যাক্তির পাসপোর্ট প্রায় ১ বছর আটকিয়ে রাখেন কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ। বহু অনুনয় বিনয় করে পাসপোর্ট চাইলে তাকে বলাহয় পাসপোর্ট নিতে হলে আমাদের বিরুদ্ধে যা সংবাদ মাধ্যমে বলেছো তা মিথ্যা বলেছো এমন আরেকটি নিউজ ওই সাংবাদিককে দিয়ে করাও তারপর পাসপোর্ট পাবে। দীর্ঘ প্রায় ১ বছর পর জনৈক স্হানীয় আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে সেই ভুক্তভোগী ক্ষমা চেয়ে পাসপোর্ট ফেরত পান।
এ ব্যাপারে মিলান কনস্যুলেট জেনারেল ইকবাল আহমেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, প্রবাসী সাংবাদিক শিপন সম্প্রতি ইতালির নাগরিকত্ব গ্রহন করে ইতালিয়ান পাসপোর্ট হাতে পেলেও নিজ দেশের পাসপোর্ট আটকে আছে দূর্নীতি র কক্ষে। রাজনৈতিক জীবনে সোহেল মজুমদার শিপন ২০০৩ সালে লিয়াকত সিকদার ও নজরুল ইসালাম বাবু অনুমোদিত কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। দুঃখ প্রকাশ করে প্রবাসী সাংবাদিক শিপন বলেন ক্ষমতাসীন দের হয়েও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাের হাতে আমরা জিম্মি হয়ে আছি। প্রবাসী বান্ধব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি , তিনি যেনো দ্রুত ব্যবস্হা নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মুক্ত করেন দূর্নীতিবাজদের হাত থেকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন