শীত মৌসুমে শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সবজির বাজারে দরপতন হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ সবজির বাজার বগুড়ার মহাস্থার হাটে সয়লাব হয়ে গেছে মুলায়। তবে দাম একেবারে কম। ৩ থেকে ৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শীতকালীন এই সবজি। অন্য সবজিও হাটে উঠছে, তবে সেসব সবজির দামও কমেছে আশাতীতভাবে।
সোমবার সকালে (৩০ নভেম্বর) মহাস্থান সবজির বাজারে গিয়ে দেখা যায় শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর। তবে মুলা ও ফুলকপির আমদানি সবচে বেশি। সকালে কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে আসেন। তারা বলছেন, নভেম্বরের শেষদিকে শীতের সবজিতে ভরপুর এই হাট। এবারের মৌসুমে আগাম সবজি বিক্রি হয়েছে বেশ দামেই।
কৃষকরা জানিয়েছেন, বেগুন, মুলা, পাতাকপি, ফুলকপি, শিম মাসখানেক আগে তারা ভালো দামে বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখন দেশের অন্যান্য জেলার সবজি বাজারে আসায় চাহিদা কমে এসেছে। সে কারণে সবজির দাম এখন বেশ কম। সোমবার মহাস্থান বাজারে মুলা বিক্রি হয়েছে ৩-৪ টাকা কেজি, বেগুন ১০-১২ টাকা, শিম ১৮-২০ টাকা, ফুলকপি ১০-১১ টাকা, পটল ১৫ টাকা, বরবটি ১২ টাকা,সিম ৭-৮ টাকা, করলা ১৮-২০ টাকা এবং বাঁধাকপি ১৮-২০ টাকা পিস দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়াও কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা, নতুন পাতা পেঁয়াজ ১৫ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বগুড়া সদর উপজেলার লাহেড়িপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম নিয়ে এসেছিলেন প্রায় ৮ মণ মুলা। বিক্রি করেছেন মাত্র ১ হাজার ৪০ টাকায়। মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। কিন্তু নভেম্বরের শুরুতে তিনি বিক্রি করেন ৯৬০০ টাকা মণ দরে।
শিবগঞ্জ উপজেলার টেপাগাড়ি গ্রামের কৃষক আসলাম হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ ও নভেম্বরের শুরুতে দুই দফায় মুলা বিক্রি করেছেন বেশ দামেই। তখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ তিন-চার টাকার বেশি দাম উঠছে না। তিনি বলেন, ৫ ঝুড়ি মুলা মাঠ থেকে তুলে, ধুয়ে সেগুলো হাটে আনতে প্রায় ১২ শ টাকা খরচ হয়েছে। ১৫ শ টাকা দাম চেয়েছি; কিন্তু পাইকাররা ৬০০ টাকা দাম উঠিয়েছে।
মহাস্থান হাটলাগোয়া অন্ততবালা গ্রামের কৃষক সামেদ মিয়া বলেন, দিন যতই যাচ্ছে বেগুনের দাম তত কমছে। এই হাটে ৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করেছি বেগুন। আজ সবুজ গোল (মেন্টাল) বেগুনের দাম মণপ্রতি ৪০০ টাকা আর ডাঙরের (বেগুনি লম্বা) ৪৪০ টাকা দাম বলছে পাইকাররা। এ রকম হলে তার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
মহাস্থান হাটের সবজি ব্যাপারী তাহেরুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকা ও সিলেট এলাকায় সবজি পাঠান। বাজারে এখন সবজি দাম কম। তাই বেশি করে সবজি পাঠানো হচ্ছে। তা ছাড়া শীতের প্রকোপ বাড়ায় নতুন সবজিও বাজারে উঠতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই তিন ট্রাক করে মাল পাঠাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের ক্রয়মূল্যের সঙ্গে কেজিপ্রতি ৫ টাকা খরচ ধরেই সবজি পাঠাতে হয়। সে ক্ষেত্রে বাজারে কেমন দাম পাওয়া যাবে তা এখনই বলতে পারছি না।
মহাস্থান হাটের ইজারদার শফিকুল ইমলাম শফি জানান, শীত মৌসুমে মহাস্থান হাট থেকে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। কিন্তু মাঝে কিছুদিন আমদানি কম হওয়ায় এবং দাম বাড়ায় কারণে প্রতিদিন ৮-১০ ট্রাক মাল পাঠানো যেত। তবে এখন দাম কমায় এবং সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ৪০-৫০ ট্রাক করে সবজি পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, চলতি বছর বগুড়া জেলায় সবজির লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ১৮ হাজার হেক্টর। আশা করা যায়, এবার লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত আবাদ হবে। কেননা এবার সবজির চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো পাচ্ছে কৃষক।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন