কিশোরগঞ্জের নিকলীতে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে রাতুল ওরফে তোতা মিয়া (১৮) এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। উপজেলার ছাতিরচর গ্রামে রোববার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
রোববার সকালে হাওরের একটি হিজল গাছের ডালের সঙ্গে রশিতে ঝুলানো অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাতুল ওরফে তোতা মিয়া ছাতিরচর গ্রামের কাদির মিয়ার ছেলে। সে ছাতিরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মানিক চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, রোববার সকালে গাছের ডালের সঙ্গে বাঁধা রশিতে ওই কিশোরের লাশ ঝুলতে দেখেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ সময় রাতুলের ফেসবুক আইডিতে একটি ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া যায়।
ফেসবুকে দেয়া সর্বশেষ স্ট্যাটাসে সে লেখে- ‘আমি একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসি, সেও আমাকে অনেক ভালোবাসে। মেয়েটি আমার জন্য অনেক কষ্ট করছে, তার মা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে কিন্তু তার বাবা সম্পর্কটা মানেন না। সব পরিবারের ইচ্ছা থাকে ভালো টাকা-পয়সা এবং বড় ঘর দেখে বিয়ে দিতে তাদের মেয়েকে, কিন্তু আমার শুধু ভালোবাসা আছে আর কিছুই নাই। শুধু ভালোবাসা দিয়ে তো আর পেট ভরে না। তাই আমি তিন বছরের সময় নিয়েছিলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য।'
ওই স্ট্যাটাসে সে আরও উল্লেখ করে- ‘তার বাবা তাদেরকে সংসার থেকে বের করে দিয়েছে। তার বাবা আবার দুইটি বিবাহ করেছেন; তিনি বলেছেন- আমাকে ভুলে গেলে তাদেরকে মেনে নিবেন, শুধু আমার জন্য এ রকম হয়েছে। তার মা-ভাই-বোন সবাই তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তার মাও আমাদের সম্পর্কটা একবার মানে আরেকবার না করে। আমি তাদের কথামতো আমার বাড়ি থেকে বিবাহের জন্য পাঠিয়েছিলাম। সবাই হয়তো হাসতে পারেন যে, এত কম বয়সে বিয়া। কিছুই করার ছিল না, আমার ভালোবাসার মানুষটিকে পেতে হবে। মেয়েটা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আর ওর মা স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে আমারই জন্য। তাই আমি চাই আমার জন্য তারা আর কষ্ট না করুক। আর ভালো একটা ছেলে দেখে আপনাদের মেয়েকে বিয়া দিবেন। একটা কথা মনে রাখবেন ভাত-কাপড়ের অভাবে মানুষ মরে না। মরে তো অমানুষের অত্যাচারে। মেয়েটাকে কেউ কিছু বলবেন না। কিছু কিছু সময় নিজেকেই সরে যেতে হয় ভালোবাসার মানুষটিকে ভালো রাখার জন্য।’
নিকলী থানার ওসি মো. সামসুল আলম সিদ্দিকী জানান, এ ঘটনায় একটি ইউডি মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ব্যতিক্রম কিছু পাওয়া গেলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই শিক্ষার্থীর ফেসবুক স্ট্যাটাসকে সুইসাইড নোট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ওসি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন