বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যে চাকুরি ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। প্রতিদিনই চাকুরিচ্যুত হচ্ছেন হাজারো শ্রমিক। সৌদি আরবে চালু হওয়া নূতন নিয়মের কারণে অনেককেই ইতোমধ্যে দেশে ফিরতে হয়েছে। অনুরূপ নিয়ম মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ গুলোতেও চালু হতে যাচ্ছে। বড় শ্রমবাজার সৌদী আরবে নূতন নিয়ম অনুযায়ী ক্লিনার ছাড়া অন্য কোন পদে বিদেশীদের আর রাখবে না। নিজ দেশের বেকার ছেলে-মেয়েদের চাকুরির ব্যবস্থা করতেই এমন নিয়ম চালু করছে সৌদী আরব। এই নূতন নিয়মের কারনে সৌদী আরবের হোটেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং বিভাগে কর্মরতদের ভিসা থাকা সত্ত্বেও চাকুরি হারাতে হচ্ছে। ভিসা থাকার পরও নূতন নিয়মের ফলে চাকুরি হারিয়ে ইতোমধ্যেই দেশে ফিরেছেন অনেকে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সৌদী আরবে আবাসিক হোটেলে রিসেপশন, আইটিসহ বিভিন্ন ম্যানেজিং বিভাগে অনেক বাংলাদেশী কর্মরত ছিলেন। অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানেও ব্যবস্থাপনায় চাকুরি করতেন বাংলাদেশের নাগরিকরা। ইতোমধ্যেই নূতন নিয়মের আওতায় নোটিশ করার ফলে ভিসা থাকা সত্ত্বেও চাকুরিচ্যুত হয়েছেন এসব বাংলাদেশীরা।
এছাড়া ব্যবসায়ও নূতন নিয়ম বেঁেধ দিয়েছে সৌদী আরব সরকার। ব্যবসায় স্থানীয় সৌদীদের চাকুরি দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতেও সৌদী আরবে চাকুরির বাজার সঙ্কুচিত হয়েছে বিদেশীদের জন্য। সৌদী আরবই হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীদের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার।
এই বড় শ্রমবাজার থেকে দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল ছেড়ে অনেকেই দেশে ফিরছেন শূন্য হাতে। সূত্র জানায়, গত ২ মাসে শুধু মধ্যপ্রাচ্য থেকেই এক লাখের বেশি শ্রমিক চাকুরি হারিয়ে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরেছন।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হওয়ার খবরের মধ্যেই প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে বার্তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত শনিবার বিশ্বব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে বাংলাদেশের রেমিটেন্স (প্রবাসী আয়) ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে এ বছর। প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হবে বিশ্ব শ্রমবাজারে অষ্টম। কিন্তু অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার যে হারে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে এতে আগামী বছর গুলোতে প্রবাসী আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করবে। এতে প্রবাসী আয় কমে আসবে বলেও আশঙ্কা করছেন শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা।
অপরদিকে অর্থনীতিতে করোনার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে করেছে ইউরোপসহ আমেরিকার মত দেশে। চলতি বছরের মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনার ফলে স্থবির হয়ে আছে বিশ্ব অর্থনীতি। ইউরোপের দেশ গুলোতে দ্বিতীয় দফা করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবারো শুরু হয়েছে লকডাউন। ইতোমধ্যেই ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনে লকডাউন শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফায়। যুক্তরাজ্যে এ সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে দ্বিতীয় দফা লকডাউন ইতোমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দফা লকডাউনের দখল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় দফা লকডাউনে অর্থনৈতিক ধাক্কা আরো বড় আকারে লাগবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ইউরোপ এবং আমেরিকার দেশ গুলোতে।
লকডাউনের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের তেলের দাম পড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। দেশে দেশে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তেল বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায় মধ্যপ্রাচ্যের। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের আয়ের বড় উৎস হচ্ছে জ্বালানী তেল বিক্রি। সুতরাং তেল বিক্রি কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতেও ধাক্কা লেগেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ধরে রেখেছে প্রবাসী আয় ও গার্মেন্টস শিল্প। দেশে দেশে করোনার বিরূপ প্রভাবে শ্রমবাজারে মূল ধাক্কা শুরু হলে বাংলাদেশের বৈদেশীক আয়েও এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যেই ভোট ডাকাতির নির্বাচনে বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী রোববার বলেছেন, করোনার ফলে অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন