সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি মার্কিন হোম ডিপার্টমেন্ট। তবে রাজনৈতিক আশ্রয় না পেলেও তিনি সেখানে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন যে, বাড়িতে বেশীরভাগ সময় থাকেন। কিছু কিছু ছোটখাট অনুষ্ঠানে তাকে কদাচিৎ দেখা যায়। এছাড়া, তিনি লোক চক্ষুর অন্তরালেই থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত একটি ব্যয়বহুল দেশে কীভাবে দিনের পর দিন বছরের পর বছর থাকছেন সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা; এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন যুদ্ধাপরাধীদের টাকায়। মীর কাসেমের পুত্র মূলত তাকে অর্থ যোগান দেয় এবং তার অর্থায়নেই তিনি চলেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নিষ্পত্তিতে বিলম্ব করছিল; তখন বিচারপতি সিনহা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। এই অনুমতি প্রার্থনা সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, তিনি এখানে কীভাবে চলবেন। তখন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা লিখিতভাবে জানান যে, তার কিছু বন্ধু-বান্ধব আছে যারা তার যুক্তরাষ্ট্রে থাকার খরচ নির্বাহ করবে। এরপর মীর কাশেমের পুত্র এফিডেভিট দিয়ে মার্কিন সরকারকে জানায় যে, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সমস্ত ব্যয়ভার তিনি বহন করবেন।
উল্লেখ্য যে, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় যুদ্ধা পরাধীদের কয়েকটি মামলা বিচারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলাটি নিষ্পত্তির যে বেঞ্চ সেই বেঞ্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। সে সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বাঁচানোর জন্য লন্ডনে তিনি গোপন বৈঠক করেছিলেন বলে খবর বেরিয়েছিল। এজন্য তিনি আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে ওই শুনানির প্যানেল থেকে বাদ দিয়েছিলেন? সেইসাথে ওই শুনানির সময় তিনি একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। ওই সময় তিনি একজন মন্ত্রীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কন্টেম্পট অব কোর্ট এর অভিযোগ এনেছিলেন। তাদেরকে আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিতও করেছিলেন।
কিন্তু ওই মামলায় জনদাবি এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত তিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বাঁচাতে পারেনি। কিন্তু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাথে তার পারিবারিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্র বলছে যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্রদের সঙ্গে মীর কাশেমের পুত্রদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মীর কাশিমের পুত্রের যে, বিনিয়োগ এবং ব্যবসা সেখানে কিউসি গ্রুপের অর্থাৎ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সেই গ্রুপের অংশীদারিত্ব রয়েছে। সেখান থেকে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কে অর্থ সরবরাহ করা হয় বলেও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরপরই নানা রকম বিতর্কিত মন্তব্য এবং সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য নানা রকম উস্কানিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বিচারপতি অপসারণের সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী মামলায় রায় দেয়ার ক্ষেত্রেও তিনি সীমা লংঘন করেছিলেন বলে আইন জ্ঞরা মনে করেন। পরবর্তীতে ঘুষ কেলেঙ্কারি এবং অবৈধ অর্থের নারী ঘটিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের সকল বিচারপতি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তার সঙ্গে বসতে অস্বীকৃতি জানান।
এর পরপরই সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছুটির আবেদন করে দেশের বাইরে চলে যান। সিঙ্গাপুর থেকে তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন চিঠি পাঠান। আর এই পদত্যাগ করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনি কিছুদিন সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম বিতর্কিত বক্তব্য রাখেন এবং এ সংক্রান্ত একটি বইও রেখেছিলেন। কিন্তু ওই বই এবং তার বক্তব্য এমন আলোচিত না হওয়ায়, এখন তিনি তেমন মোটামুটি যুদ্ধা পরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং আতিথেয়তায় নিভৃত জীবন-যাপন করছে বলে জানা গেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন