পুত্র ইরফান সেলিমের ঘটনার পর এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার নানা রকম অপকর্ম, বিশেষ করে অবৈধ জমি দখলের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। আর এ সমস্ত তথ্যদিতে হাজী সেলিম বিব্রত, বিব্রত আওয়ামী লীগও। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, হাজী সেলিম যদি অপকর্ম করে তাহলে ব্যক্তি অপকর্ম আওয়ামী লীগ দায় নেবে না। আওয়ামীলীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, গত ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিমের দ্বিতীয় পুত্র ইরফান সেলিম কলাবাগানে একজন নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধর করেন। হাজী সেলিমের গাড়িতে করে ইরফান সেলিম কলাবাগান ক্রসিং দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেল গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ওই মোটর সাইকেলে আরোহী ছিলেন একজন কর্মকর্তা। এরপর হাজী সেলিমের দেহরক্ষী গাড়ি থেকে থেমে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। এই ঘটনা অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। পরদিন ওই নৌ কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলার জেরে ইরফান সেলিম গ্রেফতার হয়েছেন । তার তিন দিনের রিমান্ড শেষে আজ আবার তিন দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। পরে ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে মাদক এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দুটি পৃথক মামলায় ইরফান সেলিমকে এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এছাড়াও ইফরান সেলিমের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকেই হাজী সেলিম নীরব এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে ইরফান সেলিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, বা তাঁর পক্ষে কোনো রকম বক্তব্য বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি। তবে হাজী সেলিমের অনুগত কর্মীরা ব্যবসায়ীক পরিচয়ে সংবাদ সম্মেলb করে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
কিন্তু এই অভিযোগে হালে পানি পড়েনি । বরং বিভিন্ন গণমাধ্যমে হাজী সেলিমের অবৈধ দখলের তথ্য এখন ফলাও করে প্রকাশিত হচ্ছে। এ তথ্য যে একবারে অমূলক ভিত্তিহীন নয়, তা প্রমাণ করেছে সরকারি একটি ব্যাংক। যেদিন ইরফান সেলিম গ্রেফতার হন সেদিন সন্ধ্যায় অগ্রণী ব্যাংক হাজী সেলিমের কব্জায় থাকা তাদের একটি জমি উদ্ধার করেছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, হাজী সেলিমের একটা দখলদারি মনোভাব ছিল। তার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল ,বুড়িগঙ্গা দখলে নানা অভিযোগ বিভিন্ন সময় উঠেছিল। সে সমস্ত অভিযোগগুলো ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হাজী সেলিম ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পেরেছিলেন।
তাছাড়া নির্বাচিত এমপি হিসেবে তিনি আইনের প্রভাবশালীদের কে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকেও উদাসীন রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু ইরফান সেলিমের ঘটনা সামনে আসার পর এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তার ব্যাপারে তদন্ত করছে। তার যে সমস্ত অবৈধ দখল করা সম্পত্তি রয়েছে, সেগুলো উদ্ধারের জন্য প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। আর এ ঘটনায় আনপ্রয়োগকারী সংস্থা প্রশাসনকে সহয়তা করার অঙ্গিকার করেছে আওয়ামীলীগ।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, অপরাধের দায়ে অপরাধীকেই নিতে হবে সে দায় দল নেবে না। এমনকি যদি শেষ পর্যন্ত হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ এমনকি আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার হতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ পুরো বিষয়টির দিকে নজর রাখছে। তদন্ত যাতে নির্মোহভাবে হয়, হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে তার দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেবে না। এই তদন্তকে প্রভাবিত করারও চেষ্টা করবে না আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেছেন যে, হাজী সেলিম কোন অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। এখানে আওয়ামী লীগের করণীয় কিছুই নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন