‘১০ বছর ধরে আদালতে আসছি আর যাচ্ছি’ কোন বিচার পাচ্ছি না!
01 Nov, 2020
১০ বছর ধরে আদালতে যাওয়া আসা দুই ভুক্তভোগী নারী
আদালত ও বিচারক সংকটসহ নানা কারণে মামলার দীর্ঘসূত্রতার কবলে চট্টগ্রাম আদালত। ফলে প্রতিনিয়তই হাহাকার বাড়ছে বিচারপ্রার্থীদের। পরিসংখ্যান বলছে, চট্টগ্রামে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ২ লাখ ১৮ হাজারে। গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতসহ অন্তত ১৪টি আদালতে বিচারক নেই বছরের পর বছর।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির তথ্য মতে, গত জুন পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২ লাখ ১৮ হাজার। এর মধ্যে চট্টগ্রামে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অধীন ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৬টি মামলা বিচারাধীন। মহানগর দায়রা জজ আদালতের অধীন বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪৪ হাজার ৫২২টি।
মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৩৫ হাজার ১৫৯টি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৩ হাজার ৫১২টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের জজশিপের ১৪টি আদালতে দীর্ঘদিন বিচারকের পদ শূন্য থাকায় বিচারপ্রার্থীরা চরম দুর্ভোগে। সার্বিক বিচারকার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। একাধিক আদালতের চার্জে দায়িত্ব পালন করছেন একজন বিচারক। এছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা হচ্ছে। বিচারের জন্য মামলা প্রস্তুত হলেও মামলা আর নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
বিচারপ্রার্থীরা বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে এই আদালতে আসছি আর যাচ্ছি, কোন বিচার পাচ্ছি না। মামলার তারিখ পড়লে হাজিরা দিয়ে চলে যাই। এসব মামলার কারণে শারীরিক ক্ষতি ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে এবং আমরা এসব মামলার নিষ্পত্তি চাই।
জজশিপে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে বিচারক নেই ১ বছর ১০ মাস ধরে। চট্টগ্রামের দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলার বিচারিক কার্যক্রম হয় এই আদালতে। বিচারক না থাকায় বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচার কাজ স্থবির হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন, বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পিপি।
এছাড়া অন্তত ১৩টি আদালতে বিচারক নেই বছরের পর বছর। মুখ্য মহানগর হাকিম (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) আদালতে ৩৫ হাজার ১৫৯টি মামলার বিপরীতে বিচারক আছেন মাত্র ৮ জন। গড়ে প্রতিমাসে বিচারকপ্রতি প্রায় ৪ হাজার ৪০০টি মামলা পরিচালনা করতে হয়। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মামলাজটের।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দন বলেন, বিচার প্রার্থীরা যদি এসে বিচার পেতে দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে তাহলে মানুষ হতাশ হবে এবং প্রতিদিন নতুন মামলা হচ্ছে আবার অন্যদিকে পুরাতন মামলাতো শেষ হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম জজ আদালতের বিভাগীয় স্পেশাল পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারির পর থেকে আমার আদালতে কোনো বিচারক নেই। শূন্য পদগুলো পূরণ করার জন্য আইনজীবী সমিতিও বলেছে। বিচারক সংকট দূর করে মামলাজট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি আইনজীবীদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন