সুন্দরবন জলদস্যু ও বনদস্যু মুক্ত নিয়ে র্যাবের তৈরি 'অপারেশন সুন্দরবন' সিনেমাটির শুটিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আগামী ২৬ মার্চ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে পারে।
শনিবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে র্যাব সদর দপ্তরে ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি নির্মিত পূর্ণ্যদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অপারেশন সুন্দরবন'-এর নির্মাণ অগ্রগতি ও সার্বিক বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আমরা মোট তিনটি ভাগে চলচ্চিত্রটির শুটিং শেষ করতে যাচ্ছি। আশা করছি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৬ মার্চে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দিতে পারব। অপারেশন সুন্দরবন কোন লাভজনক চলচ্চিত্র নয়। এটি মূলত সমাজ সংস্কারমূলক চলচ্চিত্র। সুন্দরবনের যেসব দস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরত এসেছে, তাদের জীবন যাপনের মান উন্নয়নে চলচ্চিত্র থেকে উপার্জিত মুনাফা ব্যয় করা হবে।
আশিক বিল্লাহ বলেন, ২০১২ সালের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র্যাব পরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনের জলদস্যু দমনের টাস্ক-ফোর্স গঠনের মাধ্যমে জলদস্যু মুক্ত করণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। লিড এজেন্সি হিসেবে র্যাব ২০১২ সাল থেকে সুন্দরবনে জোরালো অভিযান পরিচালনা করে আসছে। অভিযানে গ্রেফতার হয় ২৬২ জন জলদস্যু। একের পর এক অভিযানে ফেরারী জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় জলদস্যুরা। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও র্যাবের কর্মতৎপরতায় ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ১ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২ দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২ টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছে।
সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ১ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা করেন। সুন্দরবনের এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। অপহরণ ও হত্যা এখন বন্ধ হয়েছে। জেলেদের উপার্জিত অর্থের ভাগ কাউকে দিতে হচ্ছে না। মাওয়ালী, বাওয়ালী, বনজীবী, বন্যপ্রাণী এখন সবাই নিরাপদ। নির্ভয় নির্বিঘ্নে আসছে দর্শনার্থী, পর্যবেক্ষক ও জাহাজ বণিকেরা। সুন্দরবন কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক গতিশীলতার ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
সিনেমাটির পরিচালক দীপঙ্কর দীপন জানান, ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি তৎকালীন র্যাব প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ আমাকে বলেন, সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে সিনেমা তৈরি করতে চাই। এজন্য তিনি সরেজমিন পরিদর্শনে পাঠান। দীর্ঘদিন সেখানে থাকার সময় তৎকালীন র্যাবে কর্মরত অফিসারদের খোঁজ খবর করি। তাদের কাছ থেকে সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত করার বিভিন্ন গল্প ছাড়াও স্থানীয় জেলে, সেখানে বসবাস করা পরিবার ও দস্যুদের মাধ্যমে নির্যাতিত অনেকের সঙ্গে কথা বলি। এরপরই সিনেমাটির কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে ৩৩দিনের শুটিং শেষ হয়েছে। সিনেমাটিতে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত আছেন।
সিনেমায় অভিনয় করছেন, চিত্রনায়ক রিয়াজ, সিয়াম আহমেদ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, রৌশান, নুসরাত ফারিয়া, শতাব্দী ওয়াদুদ, সামিনা বাশারসহ আরো অনেকে। এতাছাড়া প্রায় ১৩শ আর্টিস্ট সিনেমাটিতে কাজ করছেন। এটি একটি ব্যয়বহুল সিনেমা। এখানে অসাধারণ কিছু দৃশ্যের পাশাপাশি উন্নত কারিগরি ছোঁয়া আছে।
তিনি আরও জানান, সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত হওয়ায় বাঘ, হরিণের সংখ্যা সেখানে বেড়েছে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন