প্রশাসনের লোক পরিচয়ে গত মাসে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ ইবনে ইউনূসকে। তারপর থেকে আর সন্ধান মেলেনি নরসিংদীর এই তরুণের। ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে তিনি তার বড় ভাই আবদুর রহমানের সঙ্গে থাকতেন। আবদুল্লাহর মতো অনেক তরুণকে এভাবেই গত এক যুগে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ বা র্যাবের সদস্যরা। জঙ্গি তকমা দেয়ার পর এদের অনেকের আর কোনো সন্ধান মেলেনি।
শুধু গুমই নয়, রাজনৈতিক কাজে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে গত এক যুগে র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা সাদা পোশাকে ইচ্ছেমতো মানুষের বাসায় ঢুকে তল্লাশি করেছে। জঙ্গি তকমা দিয়ে ধরে নিয়ে গেছে অনেক মানুষকে, অনেককে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাও করা হয়েছে। এমনকি বাসায় তাবলিগ জামায়েতের বই “ফাজেয়েলে আমল” পাওয়ার পর এটাকেও “জঙ্গিবাদী” বই হিসেবে আখ্যা দিয়ে গণমাধ্যমের সামনে প্রচার করার নজির রয়েছে র্যাবের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের গত এক যুগের দু:শাসনে এমন শত শত ঘটনার নজির রয়েছে। ফলে দেশের মানুষ দিন দিন ফুঁসে উঠছে। কখনও কখনও প্রতিবাদ করলেও, রক্তাক্ত উপায়েই তা দমন করছে আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের পেটোয়া ছাত্রলীগ। যেমনটা তারা গণহত্যা চালিয়েছিলো শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন স্বেচ্ছাচারিতা ফলে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) লালমনিরহাটের একটি মসজিদে যখন দুই ব্যক্তি অস্ত্র তল্লাশির নাম করে ঢুকলো, তখনই দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন সাধারণ মানুষ।
গোয়েন্দা সংস্থা লোক পরিচয় দেয়ার পর ক্ষোভে যেনো ঘি ঢেলে দেন তারা। এরপর সেই দুই তরুণ যা করলেন, তাতে জগনঘের ক্ষোভ সকল সীমা অতিক্রম করল। অস্ত্র তল্লাশির নাম করে তারা মসজিদের র্যাকে থাকা কোরআন শরীফ, হাদিসের বই ও ধর্মীয় অন্যান্য মাসায়েল সম্পর্কিত বই ছুড়ে ফেলতে লাগলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মুসল্লিরা জানান, ওই দুই ব্যক্তি এ সময় পবিত্র কোরআনকে তীব্র অবমাননাও করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সে যখন মহানবী (সা.) এর জঘন্য অবমাননায় বিশ্বের মুসলমান ফুঁসে উঠেছে, ঠিক একই সময় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে মসজিদের ভেতরে ঢুকে কোরআনের অবমাননা একদমই সইতে পারেন নি সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা দীর্ঘ দিন ধরে এ ধরনের তল্লাশিতে আগে থেকেই বীতশ্রদ্ধ মানুষ তখনই পাকড়াও করলেন দুই অপরাধীকে। এরপর দীর্ঘদিনের রাগ-ক্ষোভ উগরে দিলেন সবাই।
গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর দীর্ঘদিনের জুলুমের সাথে ফ্রান্সে নবী (সা.) এর অবমাননায় ফুঁসে ওঠা সাধারণ মানুষ তাই এদিন তাদের সব রাগ-ক্ষোভ ঢেলে দেন।
এ ঘটনায় ইউনূস মো: শহিদুন্নবী জুয়েলকে (৫০) গ্রামবাসী পুড়িয়ে হত্যা করলেও, তাঁর সঙ্গে থাকা অপরব্যক্তি সুলতান মো: রুবাইয়াত সুমন এখন পুলিশের হেফাজতে। এদের সঠিক পরিচয় ও আসল উদ্দেশ্য রাখঢাক করছে পুলিশ। আর এতে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ আরো দানা বাঁধছে। নিহত ব্যক্তিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথিত সেক্যুলাররা যতটা সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে, গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে মসজিদে ঢুকে কোরআন অবমাননার বিষয়ে ততটাই নীরবতা পালন করছে দেখা যাচ্ছে সেই সেক্যুলার ও ইসলাম-বিদ্বেষীদের। পুলিশও রহস্যজনক কারণে আটক হওয়া ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে আনছে না। কেউ কেউ দাবী করছেন, এরা নাকি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু দুইজন মানসিক অসুস্থ ব্যক্তি একই সঙ্গে মটরসাইকেলে চড়ে একটি মসজিদে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিবে এবং অবলিলায় পবিত্র কোরআনের অবমাননা করবে এই গল্প ঠিক মিলানো যাচ্ছে না।
এখানেই শেষ নয়,এ ঘটনার পর বিভিন্ন টিভি ও পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে যেসব খবর প্রকাশ করা হয়েছিলো, সেগুলোও এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এর সাথে গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে বলে লালমনিরহাটের মানুষ মনে করেন।
বর্তমান ফ্যাসিবাদি সরকার অতীতে একটি ঘটনা দিয়ে অপর ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে বহুবার। দুইদিন আগে র্যাবের উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন মার্কিন সিনেট। এদিকে ফ্রান্সের ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এমতাবস্থায় পুরো বিষয়টি সরকারের উস্কানি কি না, এনিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
এখানে উল্লেখ্য, ২৯ অক্টোবর বিকালে ঘটনার পরপরই গোয়েন্দা সংস্থা থেকে মিডিয়ায় ফোন করে বলে দেয়া হয়েছে এ নিয়ে যেন কোন নিউজ এবং ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা না হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন