বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরব আলী। মন চাইলেই তিনি যাকে ইচ্ছে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। তার রয়েছে নিজস্ব বাহিনী।
এলাকার সাধারণ মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে এ বাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে বাদ যাননি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও।
সর্বশেষ গত রোববার রাতে নুরুল ইসলাম (২৬) নামে এক জেলেকে ধরে রাতভর নির্যাতন করেছে আরব আলী ও তার বাহিনী। পরে ১৫ হাজার টাকা আদায় করে তাকে ছাড়া হয়েছে।
এ নিয়ে নুরুলের স্ত্রী শারমিন আকতার মঙ্গলবার গোদাগাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে পুলিশ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। রোববার রাতে উপজেলার পিরিজপুর মোড়ে আরব আলী তাকে দেখতে পেয়ে ডাকেন। তাকে মোড়ে থাকা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান স্মৃতি সংসদের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আরব বলেন- পদ্মায় মাছ ধরার নামে নুরুল মাদক পাচার করে। তাই তাকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে।
তখন নুরুল বলেন, আমি মাদক ব্যবসা করি না। মাছ ধরে সংসার চালাই কিন্তু আরবের কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে যাই। তাকে আমি টাকা দিতে পারব না বলে জানিয়ে দেই। কিন্তু আরব আমাকে স্মৃতি সংসদ থেকে বের হতে দেননি। রাত ১১টার পর স্মৃতি সংসদের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আরব নিজে আমাকে মারধর শুরু করেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সহযোগী ছিল।
নুরুল আরও বলেন, আরব ও তার সহযোগীরা রড, হকিস্টিক ও জিআই পাইপ দিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। তাদের মারধরের কারণে জীবন বাঁচাতে আমি বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের ১৫ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলি। এ টাকা দিলে আরব আমাকে ভোরে ছেড়ে দেয়; কিন্তু এখন আরও ৩৫ হাজার টাকার জন্য আরব আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি আর গোপনে চিকিৎসা করাচ্ছি।
গোদাগাড়ী থানার ওসি খায়রুল ইসলাম বলেন, নুরুলের স্ত্রীর অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে একজন এএসআইকে তদন্তের জন্য দেয়া হয়েছে। আবারও আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আরব আলী ছাত্রলীগে সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয়। তার দাপটে গোটা পিরিজপুর গ্রামের মানুষ তটস্থ। এই গ্রামেই আরব আলীর বাড়ি।
স্থানীয়রা আরও জানান, আরব নিয়মিত ফেনসিডিল সেবন করেন। ফেনসিডিলের টাকা জোগাড় করতে না পারলেই শুরু হয় চাঁদাবাজি। টাকার বিনিময়ে জমি দখল-পুকুর দখলের মতো কর্মকাণ্ড নিজস্ব বাহিনীকে নিয়ে করে দেন আরব আলী। আর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান স্মৃতি সংসদকে তিনি নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেন। যাকে ইচ্ছে হয় সেখানে নিয়ে এসে করা হয় নির্যাতন। ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না।
সম্প্রতি আরব আলী ও তার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গোদাগাড়ীর গুণীগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম। গত ১০ অক্টোবর মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনকে ঘিরে তার ওপর রড, জিআই পাইপ ও হকিস্টিক নিয়ে হামলা চালানো হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপনির্বাচনে পোলিং অফিসার ছিলেন গুণীগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন অফিস সহকারী। তার নাম জাহাঙ্গীর আলম। আরব ও তার সহযোগীরা কেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় জাহাঙ্গীর আপত্তি করেন। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আরব ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামের কাছে গিয়ে নালিশ করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক উল্টো আরবকেই তিরস্কার করেন। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আরব। ভোট শেষ না হতেই বিকালে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষক তখন পাশের শশাডাইং এলাকায় একটি ড্রাগন বাগানে ছিলেন। আরবসহ ১৫-২০ জন তাকে পিটিয়ে আহত করেন।
স্থানীয়রা বলছেন, স্থানীয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন আরব আলী। তার হাত থেকে দলীয় নেতাকর্মীরাও রেহায় পান না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম রাব্বানীর মোটরসাইকেল শোডাউনে হামলা চালান এই আরব।
রাব্বানী তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি তানোরের মুণ্ডুমালা পৌরসভার মেয়র। নির্বাচনে তিনি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাই স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর অনুসারী আরব আলীর নেতৃত্বে তার সহযোগীরা রাব্বানীর শোভাযাত্রায় হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের অন্তত ১৩ নেতাকর্মী আহত হন। ভাংচুর করা হয় একটি জিপ, একটি পিকআপ ভ্যান ও ২৫টি মোটরসাইকেল।
ছাত্রলীগ নেতা আরব আলী অবশ্য এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আমি এসব বিষয়ে মুখে বলব না। আমি লিখিতভাবে মিডিয়াকে বিষয়গুলো অবহিত করব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন