বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। মামলার ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭৪ জন সাক্ষীই আদালতে উপস্থিত হয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এবং আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে মনে করছেন তারা।
তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরায় অসঙ্গতি ও পরস্পরবিরোধী তথ্য রয়েছে। এর ফলে আসামিরা ‘বেনিফিট অব ডাউট’ (সন্দেহ হলে নির্দোষ মনে করা) সুবিধা পেতে পারে বলে তারা আশা করছেন।
রিফাত হত্যা মামলায় ১৪ অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামির বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন বিচারিক আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। আর আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন, শাহজাহান মিয়া, নারগীস পারভীন সুরমা, গোলাম মোস্তফা কাদের প্রমুখ।
জেলা শিশু আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রিফাত হত্যা মানুষের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটেছে। এ মামলায় রিয়াজ নামের একজন সাক্ষী সৌদী আবর চলে যাওয়ায় তার সাক্ষগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। অন্য কোনো সাক্ষীই অনুপস্থিত ছিলেন না। আমরা আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করছি। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করছি।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী নারগিস পারভিন সুরমা বলেন, অন্য আর উৎসুক মানুষের মতো আমার মক্কেলও ঘটনাস্থলে শুধু উপস্থিত ছিল। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ ছিল না। এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ আদালতে কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. শাহজাহান মিয়া এবং গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, হত্যার ঘটনায় অতিরিক্ত বেশ কিছু সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর কোনো প্রয়োজন ছিল না।
তারা বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল সাক্ষী ২০-২৫ জন। সঙ্গে ডাক্তার ও পুলিশ কর্মকর্তা মিলিয়ে ৪০-৪৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দিতে জড়িতদের বিষয়ে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব ছিল। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করায় কিছু কিছু বিষয়ে বিভ্রান্তি দেখা গেছে।
গত ১৪ অক্টোবর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান রায়ের জন্য আজ ২৭ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। এরপর ১৩ জানুয়ারি থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন বিচারক। আর বাকি চারজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন