শারদীয় দুর্গোৎসব। যদিও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সাত্বিক, তবুও সনাতন ধর্মীদের প্রাণের উৎসব। তাতে আবার বিজয়া দশমী। তাহলে মনে রঙ না লাগিয়ে কী থাকা যায়! তাই তো সেই সিঁদুরের রাঙা রঙে সাজলেন দেবী ‘দুর্গতিনাশিনী’। সোমবার (২৬ অক্টোবর) পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এদিন মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন মা। অগণিত ভক্তদের মনে এখন তাই বিদায়ের বিষাদ।
বিজয়া দশমীর দিন দশমী পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা বা দর্পণ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মা দুর্গার চরণে সিঁদুর দেন ভক্তরা। অন্য বছর দশমীতে একে অন্যকে সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দেন নারীরা। তবে এ বছর সামাজিক দূরত্ব মেনে সিঁদুর খেলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ।
দুপুর ১২টা থেকে ঢাকায় প্রস্তুত বিসর্জনের ঘাটগুলো। রাজধানীর বেশিরভাগ বিসর্জন হবে বুড়িগঙ্গার সোয়ারীঘাটে। টঙ্গীর তুরাগ নদীতেও বিসর্জন চলবে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সবাইকে বিসর্জন শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি।
বিসর্জনের সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের পাশাপাশি বিসর্জন ঘাটে কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রস্তুত থাকবে। এ বছর পূজায় কোনো ধরনের শোভাযাত্রা হবে না। একটি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনে যে কয়েকজন মানুষ প্রয়োজন শুধু তাদেরই প্রতিমার সঙ্গে ঘাটে আসতে বলা হয়েছে। বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত গণমাধ্যমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর যে শোভাযাত্রা হবে না, তা আগেই জানানো হয়েছিল। এ বছর ঢাকা মহানগরে দুইশর বেশি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, যার যার মত করে এসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জন দেবে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ও র্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা নদীবন্দরে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, প্রতিমা বিসর্জন যাতে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়, বিআইডব্লিউটি থেকে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিটিএ’র ডুবুরি দল ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে বুড়িগঙ্গার তীরে রাখা হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে মাঠে নামার জন্য।
পুরাণ বলে, ‘দুর্গম’ নামে এক অসুর ছিল। তার কাজ ছিল জীবজগতের জন্য দুর্গতি সৃষ্টি করা। যে দেবী সেই দুর্গম অসুরকে বধ করে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবতাদের হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং জীবজগৎকে চিরকাল দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।
ভারতবর্ষের বাঙালি হিন্দু মানসে দুর্গা প্রতিবাদের দেবী, প্রতিরোধের দেবী। একই সঙ্গে তিনি ‘মাতৃরূপেণ’ ও ‘শক্তিরূপেণ’। এ উৎসব শরৎকালে উদ্যাপিত হয় বলে এটিকে শারদীয় দুর্গোৎসবও বলা হয়।
পুরাণ মতে, এ তিথিতে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে লঙ্কার রাজা রাবণকে বধ করেছিলেন দশরথ পুত্র শ্রীরামচন্দ্র। এছাড়া ১০৮টি নীলপদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন রামচন্দ্র। তাই এ মহানবমীতে ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজিত হয়েছেন দেবী দুর্গা। নবমী সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়েছে সন্ধিপূজা। মহিষাসুর বধের সময় দেবী দুর্গা প্রচণ্ড ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই পূজার এ আচারের সময় দেবীকে চামুণ্ডা রূপে পূজা করা হয়েছে।
শাস্ত্রে আছে, নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদলাভ হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে রোববার দশভুজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেলপাতা, আম কাঠ ও ঘি দিয়ে এ যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি।
সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) এসেছেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন গজে (হাতি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। বিজয়া দশমী উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
এদিকে জীবানুমুক্তভাবে নিশ্চিন্তে পূজা করতে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, বনানী মাঠ পূজামণ্ডপ, জয়কালী মন্দিরসহ অন্যান্য পূজামণ্ডপে হ্যান্ড স্যানিটাইজিং স্ট্যান্ড স্থাপন করে স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্র্যান্ড সেপনিল।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন