নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় হুইলচেয়ারে বসে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করা একাধিক মামলার আসামি সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরুকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা।
রোববার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে কুতুবপুর রসুলপুর বউবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন।
ফতুল্লায় পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও দেড় ডজন মামলার আসামি মীর হোসেন মীরু সম্প্রতি এক পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে শাসিয়েছেন। সাদা পোশাকে থাকা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) এক সদস্যকে আঙুল উঁচিয়ে প্রকাশ্যে শাসানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ডিবির ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, মীরুর বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি একজন সন্ত্রাসী। তাকে ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হবে।
মীরু নিজেকে ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তার কোনো পদ নেই। কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটন।
জানা গেছে, মীরুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা, মারামারি ও চাঁদাবাজিসহ ১৯ মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে অর্ধশতাধিক। পাগলা বউবাজার ও শাহী মহল্লায় মাদকসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে মীরুর রয়েছে বিশাল বাহিনী। মীরু এক মূর্তমান আতঙ্ক। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে।
সন্ত্রাসী মীরু কুতুবপুর অঞ্চলের অপরাধীদের গডফাদার। তিনি সেক্টর দখল থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মকাণ্ড করান। কয়েক বছর আগে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে গোলাগুলিতে মীরু গুলিবিদ্ধ হন।
পরে তার পা কেটে ফেলা হয়। এরপর থেকে দুই পা নেই তার। দুই পা হারিয়ে হুইলচেয়ারে বসে অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। কিশোর গ্যাং থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ান। অন্য লোকের সহযোগিতা ছাড়া ঘর থেকে বের হতে না পারলেও ঘরে বসে অপরাধ জগৎ সামলান।
১২ অক্টোবর ফতুল্লার পাগলা বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সন্ত্রাসী রাজীব তালুকদার ওরফে ভিপি রাজীবের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মীরু। তার আগে পাগলা নয়ামাটি মুসলিমপাড়া এলাকায় মীরুর লোকজন বিশৃঙ্খলা শুরু করে। সেখানে ডিএসবির কনস্টেবল আব্দুল মতিন তাদের ধমক দেন। বিষয়টি তারা মীরুকে ফোন করে জানান। মানববন্ধনে কনস্টেবল আব্দুল মতিন হাজির হলে উত্তেজিত হয়ে উঠেন মীরু। একপর্যায়ে মীরু আঙুল উঁচিয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে মীরুকে উঁচু গলায় বলতে শোনা যায়, ‘আপনি আওয়ামী লীগ করেন? আপনি যুবলীগ করেন? ছাত্রলীগ করেন? আপনি বিএনপি করেন? জাতীয় পার্টি করেন? আপনি কেন পোলাপানরে দৌড়ানি দেবেন?’
ওই পুলিশ সদস্যকে হুমকি দিয়ে মীরু বলেন, ‘এইগুলা কিন্তু ভালো না। পূর্বের ইতিহাস কিন্তু করাইয়েন না। আপনি কেন এইগুলা করবেন? কেন দৌড়ানি দেবেন?’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন