খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিরাশী গ্রামে থাকেন প্রতিবন্ধী জাফর মোড়ল। মা-বাবা, স্ত্রী ও ৬ বছরের এক সন্তান নিয়ে তার সংসার। এক সময় তিনি এলাকায় ইটের ভাটা, মৎস্য ঘের, কৃষিজমি ও অন্যের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। সবাইকে নিয়েই ভালোই কাটছিলো তার দিন। হঠাৎ ২০১৯ জানুয়ারি মাসে ইটের ভাটায় কাজ করতে যাওয়ার সময় যশোরের লোহাগড়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার একটি পা পিকআপের চাকায় পিষ্ট হয়ে যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় কর্তব্যরত ডাক্তার তার ডান পা সম্পূর্ণ কেটে ফেলে জীবন বাঁচায়। পরিবারের সব সম্বল বিক্রি ও ধারদেনা করে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন জাফর মোড়ল। কিন্তু পা হারিয়ে হয়ে যান প্রতিবন্ধী। শুরু হয় প্রতিবন্ধী জীবন যুদ্ধের সূচনা। কি করবেন এ অবস্থায়? অসহায় অবস্থায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে পঙ্গু অবস্থায় ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একপায়ে হেঁটে ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়েই সংসার কোন রকমে খেয়ে-না খেয়ে চলতে থাকে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকীর মানবিক উদ্যোগে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন জীবনে ফিরেছে প্রতিবন্ধী যুবক জাফর মোড়ল। উপজেলার আগড়ঘাটা বাজারে জাফরকে একটি চায়ের দোকান ও প্রয়োজনীয় মালামালসহ আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করে মানবিক পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। এতে প্রতিবন্ধী জাফর মোড়লের দীর্ঘ প্রায় দুই বছরের ভিক্ষুক জীবনের অবসান হয়েছে। ফিরে পেয়েছে স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ।
তাছাড়া তার বাড়ির কাছে আগড়ঘাটা বাজারে প্রতিবন্ধী জাফর মোড়লকে পূর্নবাসনে সরকারি জায়গায় স্থান নির্ধারণ করে দেন। পরে সেখানে দোকান ঘর একটি চায়ের দোকান করে দিয়ে পূর্নবাসন করেছেন। এজন্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে গ্যাসের চুলা, সিলেন্ডার, কেটলি, কাপ-পিরিজ, চেয়ার, বেঞ্চি, প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে উপস্থিত হয়ে দোকানের উদ্বোধন করেন। এছাড়া আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ৭ হাজার টাকা ঋণেরও ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয়রা জানান, অসহায় অবস্থায় মানুষের দ্বারে দ্বারে পঙ্গু অবস্থায় জাফর ভিক্ষাবৃত্তি করতে থাকে। এলাকায় একপায়ে হেটে ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়েই সংসার কোন রকমে খেয়ে-নাখেয়ে চলতে থাকে। এই চায়ের দোকানটি হওযায় সে আবার স্বাবলম্বী হতে পারবে৷
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন বলেন, ‘আমি সবকিছু জানতে পেরে একটি কৃতিম পা সংযোজনের ব্যবস্থা করি। আমি ওই প্রতিবন্ধী মানুষটিকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবো। যাতে তাকে দেখে অন্যরা উৎসাহিত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কর্মমুখী হয়ে ওঠেন৷’
প্রতিবন্ধী জাফর অশ্রুসজল চোখে বলেন, ‘আমি ভীষণ আনন্দিত ও খুঁশি। নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনি নতুন জীবন পেয়েছেন। ছেলে ও মা-বাবাকে নিয়ে বাকি জীবনটা এ দোকানের মাধ্যমে স্বচ্ছন্দে চালাতে পারবো। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও যারা তার দূর সময়ে এগিয়ে এসেছেন। তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তার প্রত্যাশা আগামীতে দিনগুলোতে তার মত এমন অসহায় আরও প্রতিবন্ধীদের সাহার্য্যে সহযোগিতা করবেন।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, জাফর মোড়ল অফিসে এসে তার দুর্ঘটনার কথা জানিয়ে সহায়তা চান। সবকিছু শুনে আমি নিজ তহবিল ও প্রশাসনের কয়েকজনের সহায়তায় ৮ হাজার টাকা জোগাড় করি। পরে তাকে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সদস্যভুক্ত করে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। একই সময়ে তার বাড়ীর কাছাকাছি আগড়ঘাটা বাজারে সরকারী জায়গায় তার একটি চায়ের দোকান ও প্রয়োজনীয় মালামাল দিয়ে স্থায়ীভাবে পূর্ণবাসন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অসহায় প্রতিবন্ধী ও ভিক্ষুকদের পূর্নবাসনের লক্ষ্যে পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মসূচীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী জাফরকেই নয়। তার মত উপজেলায় আরও যারা প্রতিবন্ধী আছেন তাদেরকেও তালিকা করে তাদের সক্ষমতা অনুয়ায়ী স্থায়ী পূর্নবাসন করা হবে বলে জানান তিনি।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন